
বাহাদুর চৌধুরী, ৩/৯/২০২৫
ভোলা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. নুর নেওয়াজের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ উপেক্ষা, স্বেচ্ছাচারী বদলি, দুর্ব্যবস্থা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ স্টাম্প মহড়া নকলনবিশ এসোসিয়েশনের ভোলা শাখা মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো রেজিস্ট্রি কার্যক্রম, ভোগান্তিতে পড়েন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা দলিলগ্রহীতা ও সেবা প্রত্যাশীরা।
নকলনবিশদের দাবিতে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল—নতুন নিয়োগ বন্ধ ও স্বেচ্ছাচারী বদলি ঠেকানোর জন্য। মামলাটি চলমান অবস্থায় এবং নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও রেজিস্টার মো. নুর নেওয়াজ সম্প্রতি ৫ জন নকলনবিশকে বদলি এবং ৪ জনকে নতুনভাবে জেলা অফিসে পদায়ন করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে—উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকা অবস্থায় এই বদলি কীভাবে হলো? কিসের ভিত্তিতে?
নকলনবিশদের অভিযোগ,
“ভোলা সদর উপজেলায় যত দলিল লেখা হয়, তার তুলনায় নকলনবিশ অনেক বেশি। ৫৪ জন নকলনবিশ রয়েছেন, অথচ আয় হয় দিনে মাত্র ৩–৪ শ টাকা। পরিবার চালানো দায় হয়ে গেছে। তার ওপর আবার বদলি ও নতুন নিয়োগ—আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।”
একপাতা দলিল লিখে পান ২৫ টাকা, সইমোহর লিখলে ৩০০ টাকা—এই সামান্য আয়ে রাত পর্যন্ত কাজ করেও সংসার চালানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এসোসিয়েশনের সভাপতি মোসাম্মত বিবি খাদিজা ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
রেজিস্টার নুর নেওয়াজ এ বিষয়ে দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ -পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বাহাদুর চৌধুরী এবং মাতৃ জগৎ পত্রিকার রিপোর্টার রফিকুল ইসলামকে বলেন—
“দলিলের জট কমাতে এবং পরিবেশ উন্নত করতে বদলি করেছি।”
এই ব্যাখ্যা আরও ক্ষোভ বাড়িয়েছে। সাংবাদিক মহল বলছে,
“অবৈধ কাজকে যুক্তিসঙ্গত করার অপচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “সাব-রেজিস্ট্রার কার্যক্রম নীতিমালা” অনুযায়ী—
বদলি বা পদায়নের আগে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ গ্রহণ ও শুনানি অপরিহার্য
চলমান মামলা বা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ “অসদাচরণ ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা” হিসেবে গণ্য হয়
বদলির মাধ্যমে কারও আর্থিক ক্ষতি হলে, তা “ক্ষমতার অপব্যবহার” ধারা অনুযায়ী বিচারযোগ্য অপরাধ
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—আইন যদি থাকে কাগজে, আর বাস্তবে চলে ব্যক্তিপরিচালিত সিদ্ধান্তে, তবে আইনের শাসন কোথায়?
সাংবাদিক বাহাদুর চৌধুরী বলেন,
“যেখানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজের মতো বদলি করছেন, সেখানে তিনি কাকে উপেক্ষা করছেন—আইনকে, না রাষ্ট্রকে?”
রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম বলেন,
যে রেজিস্টার ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে কর্মীদের পথে নামতে বাধ্য করেছেন, তিনি জনগণের সেবক নয়, ব্যক্তি স্বার্থের বাহক।”
একজন জেলা রেজিস্টার যদি আইন, আদালত এবং মানবিক বিবেচনা উপেক্ষা করে নিজের মতো বদলি করেন, তাহলে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা কোথায়?
এই ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন।
এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন।
আইনের শাসনের প্রশ্নে কোনো আপস নয়—তা যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন।
Leave a Reply