
মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১১৫টি পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে বড় ধরনের অনিয়ম ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষার আগের রাতেই প্রায় ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের বাসায় এনে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র থেকে পড়ানো হয়।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) গভীর রাতে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনটি ভাড়াকৃত অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে করে দৌলতপুরের কুচিয়ামোড়া এবং ভেড়ামারা উপজেলার পরানপুর এলাকা থেকে পরীক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া শহরে আনা হয়। প্রথমে তাদের নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও পার্শ্ববর্তী একটি চারতলা ভবনে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই পরীক্ষার্থীদের ডা. হোসেন ইমামের মাগুর মাছের পুকুর এলাকার বাসায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ সময় পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করেন ডা. ইমামের বড় ভাই নান্নু। নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম ও কর্মচারী সুরুজ পরীক্ষার্থীদের স্থানান্তরের দায়িত্বে ছিলেন। একাধিক গোপন সূত্রে জানা গেছে,পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি জনের সাথে ১৬ থেকে ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করা হয়। দুইটি ব্যাংক চেক ও তিনটি ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে পরীক্ষার্থীরা এই অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।
‘আপডেট কুষ্টিয়া’ নামের একটি অনুসন্ধানী টিম এ ঘটনায় গোপনে পর্যবেক্ষণ চালায়। তারা জানায়, শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে প্রথম দলটি চারতলা ভবন থেকে আরএমও’র বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরও একটি অ্যাম্বুলেন্সে থাকা পরীক্ষার্থীদের সরাসরি ডা. ইমামের বাসায় নেওয়া হয়। ওই সময় সাংবাদিকরা গোপন ক্যামেরায় ঘটনাটি ধারণ করেন।
সকালে বাসার সামনে অবস্থান নেওয়া সাংবাদিকদের সামনে মারুফ হোসেন (রোল: ২৪১৭১১০০০৩৫) নামে এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রবেশপত্র, আবেদনপত্রসহ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় উপস্থিত নান্নু বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
সকাল ১০টায় শুরু হয় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অংশ নেন। তবে সূত্রের দাবি, যাদের প্রশ্নপত্র আগেই পড়ানো হয়েছিল, তারা অস্বাভাবিক দ্রুত সময়ে পরীক্ষা শেষ করেন। কেউ কেউ দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় মাত্র ৩০ মিনিটেই উত্তরপত্র জমা দেন।
অভিযুক্ত নান্নু সাংবাদিকদের জানান, “আমার আত্মীয়-স্বজনরা আমার বাসায় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।
তবে একই চাকরির পদের জন্য এতো আত্মীয় কীভাবে প্রার্থী হয়েছেন—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তিনি।
অভিযুক্ত আরএমও ডা. হোসেন ইমামের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তার অফিসেও উপস্থিত থাকেননি বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—যেখানে চিকিৎসা কর্মকর্তা ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে,সেখানে সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত?
কুষ্টিয়া জেলায় আলোচিত এই নিয়োগ প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি ইতিমধ্যে তীব্র আলোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। জেলার সচেতন মহল ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
Leave a Reply