সানজিদ ইকবাল
স্টাফ রিপোর্টার কুষ্টিয়া।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি একাধিক অভিযোগ উঠেছে যে, হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের ( MR-হোসেন ইমাম ) অস্বাভাবিক হস্তক্ষেপ জনসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসকদের অধিকাংশ সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাটে। ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন, যেগুলো অতিরিক্ত দামি বা স্থানীয় ফার্মেসিগুলোতে সহজলভ্য নয়। এতে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি মানসম্পন্ন ওষুধপ্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
একজন রোগীর স্বজন, শহরের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, “ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর দেখি তার পাশে ওষুধ কোম্পানির লোক বসে। আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। পরে ডাক্তার এমন ওষুধ দেন যা নির্দিষ্ট কোম্পানির, অথচ বাজারে কম পাওয়া যায়।”
আরেকজন রোগী জানিয়েছেন, “একটা সস্তা জেনেরিক ওষুধ থাকার পরও কিছু ডাক্তার এমন কোম্পানির ওষুধ দিচ্ছেন যেটা অনেক দামি। মনে হয় যেন কোম্পানির চাপেই এসব লেখা হচ্ছে।”
হাসপাতালের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রিপ্রেজেনটেটিভরা প্রায়শই ওয়ার্ড, চিকিৎসকদের কক্ষ ও এমনকি রোগী দেখার সময়ও উপস্থিত থাকেন। এতে চিকিৎসকদেরও চাপের মধ্যে পড়তে হয়। আবার কেউ কেউ এতে সুবিধাও পান।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা ঔষধ প্রতিনিধি সমিতির একজন সদস্য বলেন, “আমরা চিকিৎসকদের নতুন ওষুধ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকি। কিন্তু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাঘাত ঘটানো বা দামি ওষুধ লেখানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এটা চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, “রিপ্রেজেনটেটিভদের নিয়ন্ত্রণে একটি অভ্যন্তরীণ নীতিমালা চালু আছে। তারপরও কেউ যদি অতিরিক্ত প্রভাব ফেলেন বা রোগী সেবায় ব্যাঘাত ঘটান, সেক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জনস্বার্থে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষজ্ঞরা সুস্পষ্ট সরকারি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। তারা মনে করছেন, ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকদের মধ্যে পেশাদার সম্পর্ক থাকলেও, সেটি যেন রোগীদের সেবার উপর প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করতে হবে।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রোগী সেবার মান ও স্বচ্ছতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয় বরং দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। যথাযথ তদারকি ও নীতিমালা ছাড়া এমন অভিযোগ ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কাই করছেন স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply