প্রতিবেদন: বাহাদুর চৌধুরী, সি.ও.
ঢাকা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিপ্লোমা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শাহাদাত হোসেন ওরফ আফজালুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় গ্রেফতার হওয়া দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অসুস্থ ঘোষণা করে হাসপাতালের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যেসব বন্দি প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ, তারা সঠিক চিকিৎসা ও উন্নতমানের খাবার পাচ্ছেন না। চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর শত শত অসহায় নিরীহ বন্দি বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছেন। পরে তাদের মৃত্যুকে হাসপাতাল স্থানান্তরের সময় বা কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হিসেবে দেখানো হয়।
গোপন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারাগারের অভ্যন্তরে অসুস্থ বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত উন্নত খাবার অর্থের বিনিময়ে সুস্থ বন্দিদের কাছে বিক্রি করা হয়। শুধু তাই নয়, বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ওষুধগুলোও রাতের অন্ধকারে বাইরে বিক্রি করা হয়।
কারা বিধি অনুযায়ী, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারকে ২৪ ঘণ্টা কারাগারের অভ্যন্তরে হাসপাতালে থাকতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ডিপ্লোমা ডাক্তার শাহাদত হোসেন প্রতিদিন সকাল ১১টার পর হাসপাতালে আসেন। এরপর তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বিশেষ কিছু বন্দিকে হাসপাতালে ভর্তি করেন, যারা আসলে সুস্থ।
বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, এই তথাকথিত ‘ভিআইপি’ বন্দিদের কাছ থেকে তিনি প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। এছাড়া, প্রতিদিন ১০-১২ জন বন্দিকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাইরের হাসপাতালে রেফার করা হয়।
কারাগারে বন্দিদের জন্য সরবরাহকৃত খাবার সঠিক মানের কি না তা পরীক্ষা করার দায়িত্ব ডাক্তারের। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, খাবার পরীক্ষা না করেই তিনি অনুমোদন দিয়ে দেন। কারণ, যদি নিয়মমাফিক পরীক্ষা করেন, তাহলে প্রতিটি খাবারে অনিয়ম ধরা পড়বে এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অসন্তুষ্ট করবেন।
কারা হাসপাতালের অনিয়মের সঙ্গে শুধু শাহাদত হোসেন নন, বরং সুবেদার, ডেপুটি জেলার, জেলার, কারা সুপার ও ডিআইজি পর্যন্ত জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কারাগারের অভ্যন্তরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। অনেক বন্দির পরিবার ভেবেছিল, বর্তমান সরকারের আমলে এসব দুর্নীতির অবসান ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে এখনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। ফলে বন্দিরা এবং তাদের পরিবার হতাশ হয়ে পড়ছে।
এদিকে, ডিপ্লোমা ডাক্তার শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, যা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
Leave a Reply