মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।
ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে শান্ত পদ্মানদী হঠাৎ রক্তাক্ত তাণ্ডবক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় প্রভাবশালী জাকারিয়া পিন্টু, তার ভাই মেহেদী ও সহযোগী আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে গঠিত এক সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্য দিবালোকে নিরীহ মাঝি-মাল্লা ও নদীপাড়ে ঘুরতে আসা সাধারণ পর্যটকদের উপর হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীতে নৌকা ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মাঝিদের উপর হঠাৎ হামলে পড়ে সন্ত্রাসীরা। মাঝিদের মারধর করা হয় বেধড়কভাবে, ভাঙচুর করা হয় নৌকা, এবং চাঁদা আদায়ের নামে চলে তাণ্ডব।
আহত এক মাঝি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,“আমি শুধু নৌকা ঘুরাচ্ছিলাম ভাই, হঠাৎ মেহেদী-পিন্টুর লোকজন এসে আমাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিল!”আরেকজন মাঝি জানান,ওরা চিৎকার করে বলে ‘টাকা দে,ভাসানের টাকা দে!’ তারপর আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।
এ সময় দৌলদিয়া-টু-রাজশাহী নৌচ্যানেলের বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ‘গ্রুপঅন সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সহকারী পরিচালক সোহেল খন্দকার ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত মাঝিদের দেখতে পান। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন,এটা শুধু চাঁদাবাজি নয়, এটা রাষ্ট্রের আইনের উপর সরাসরি আঘাত! মাঝিদের উপর নির্মম নির্যাতন চলছে,অথচ নৌ পুলিশ নীরব!”
তার অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নদীপথে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে। প্রতিদিনের আদায়কৃত চাঁদার টাকা ভাগ হয় তিন ভাগে—এক ভাগ যায় সাঈদ খানের কাছে, এক ভাগ মেহেদী-পিন্টুর কাছে, আর বাকি অংশ যায় নৌ পুলিশের হাতে।
অন্যদিকে,নৌ পুলিশের অফিসার ইনচার্জ দাবি করেছেন,এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করব।”তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—নৌ পুলিশের চোখের সামনেই নদীতে যদি তাণ্ডব চলে, তাহলে আহতরা কার হাতে রক্তাক্ত হলো?
স্থানীয়রা জানান, গত ৪ অক্টোবর থেকে নদীতে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। ভয়ে এখন মাঝিরা ঘাটে নৌকা বেঁধে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। জীবিকার অনিশ্চয়তায় পরিবার নিয়ে তারা দিশেহারা। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষ এখন সন্তানদের মুখে খাবার তুলতে পারছেন না।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে আজ পদ্মার জল লাল হয়ে আছে আহত মাঝিদের রক্তে। প্রশাসনের নীরবতা যেন আরও ভয়াবহ প্রশ্ন তুলে দেয় এই দেশের নদীতে এখন মাঝিদের বাঁচার অধিকার কি শেষ হয়ে যাচ্ছে?
স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে সন্ত্রাসী চক্রের গ্রেপ্তার ও নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।তাদের মতে,দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ নদী ও নদীপাড়ের মানুষ অনাহারে-মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে।
Leave a Reply