মোঃ অনিকুল ইসলাম উজ্জ্বল
বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, যা প্রায় তিন লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে চরম জনবল সংকটে ভুগছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র চারজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বা বাধ্য হয়ে পটুয়াখালী, বরিশাল কিংবা ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।
উপজেলা সদর ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, যেমন কুকুয়া ইউনিয়নের আজিমপুর বাজারে একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজারে এবং গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী বাজারে একটি করে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে এসব কেন্দ্র কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি চিকিৎসাসেবাও দিচ্ছেন। তবে চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি কর্মচারী সংকটও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। হাসপাতালের ৮৮টি তৃতীয় শ্রেণির পদের মধ্যে ৫২টি এবং ৩৪টি চতুর্থ শ্রেণির পদের মধ্যে ১৬টি শূন্য। ফলে প্রশাসনিক কাজ, পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বা অন্য জেলায় রেফার হচ্ছেন। ফলে উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি বোঝা তৈরি হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় আবুল কালাম বলেন, “গত বছর মেয়ে অসুস্থ হলে কিস্তি নিয়ে বরিশাল চিকিৎসা করাতে হয়েছে। গরিব মানুষরে চিকিৎসা নেই, আমরা নাপা খেয়ে ঘরে সে থাকি।” মানবাধিকার কর্মী জোসেফ মাহতাব বলেন, “আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট কেবল প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক সংকট।” তিনি আরও বলেন, “সরকার দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তবে আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় দ্রুত চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিলে মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। এখানে চিকিৎসাসেবা শক্তিশালী করা মানে শুধু হাসপাতাল সচল রাখা নয়, এটি মানুষের মানবিক মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়।”
আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জসিম উদ্দিন সিকদার বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ রোগী ভোগান্তিতে পড়ছেন। তারা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দ্রুত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।”
Leave a Reply