ভোলা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের কলকারখানা, পরিবহন, কৃষি ও নির্মাণ খাতের কোটি কোটি শ্রমিক প্রতিদিন অসীম পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। অথচ এই শ্রমিকরাই আজ সমাজে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, নিপীড়িত ও শোষিত।
২০২৪ সালে শ্রমিকরা যখন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বে ভোলা জেলা সহ সারা বাংলাদেশের রাস্তায় নেমে এসে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছিল, তখন অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ তাদের জন্য আজও কোনো রাজনৈতিক দল জোরালোভাবে মুখ খোলেনি।
শুধু কলকারখানার শ্রমিকরাই নয় — পরিবহন খাতের সিএনজি, অটো, রিকশা, ট্রাক, পিকআপ, বাস চালক ও হেল্পারদের অবস্থাও শোচনীয়। তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেও প্রতিদিন “চাঁদা” নামক একটি ভয়াবহ অভিশাপে জর্জরিত।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে, গ্যারেজে, টার্মিনালে দেখা যায়:
“অমুক সংগঠনের চাঁদা”পুলিশিং ফি”“স্ট্যান্ড ফি”
“সিকিউরিটি চার্জ”এসবের কোনোটাই সরকারি অনুমোদিত নয়, কিন্তু শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাঁদা না দিলেই কী হয়?গাড়িতে হামলা,চালক বা হেল্পারকে মারধর,গাড়ি আটকে দেওয়া,
রাস্তায় চলাচলে বাধা সৃষ্টি
এমনকি শ্রমিক নেতারাও এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে হামলার শিকার হচ্ছেন। একাধিক জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
নরসিংদীতে চাঁদাবাজদের হাতে এসপি-ও আক্রান্ত!
একটি জঘন্য উদাহরণ হচ্ছে নরসিংদীর ঘটনা, যেখানে একজন দায়িত্বশীল পুলিশ সুপার (এসপি) নিজ চোখে সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার ঘটনা দেখে বাধা দেন।
কিন্তু চাঁদাবাজদের সাহস এতটাই বেশি যে, তারা এসপি সাহেবকেও মারধর করে বসে!
এটি প্রমাণ করে, শ্রমিক সমাজ তো বটেই — দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারাও আজ নিরাপদ নন।
ভোলার বিশিষ্ট সমাজসেবক ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার অসহায় দরিদ্র মানুষের বন্ধু শ্রমিক নেতা আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন বলেন:
“শ্রমিকদের রক্ত, ঘাম, চোখের পানি দিয়ে গড়ে ওঠা অর্থের ওপর চাঁদাবাজেরা রাজত্ব কায়েম করেছে। এই টাকার ওপর আজ রাজনীতি চলছে, দল চলছে, নেতা গড়ে উঠছে। কিন্তু যারা সেই শ্রম দিচ্ছে, তারা নিজের সন্তানকে পেট ভরে খাওয়াতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন:
“আমাদের চালক-হেল্পার ভাইয়েরা রাস্তায় রাস্তায় অপমানিত হচ্ছেন। কখনো পুলিশ, কখনো চাঁদাবাজ, কখনো কোনো কথিত সংগঠনের লাঠিয়াল বাহিনী — সবাই মিলে শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। আজ এসপি সাহেব মার খাচ্ছেন — তাহলে সাধারণ শ্রমিকের কি অবস্থা, বলুন?”
আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন জামাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন:
“এই অবস্থা আর চলতে পারে না। যদি শ্রমিকদের জন্য বাস্তব সংস্কার না আনা হয়, যদি চাঁদাবাজি বন্ধ না হয় — তাহলে সামনে সারাদেশের শ্রমিকদের নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলনের ডাক আসবে।”
শ্রমিক নেতা আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন ভোলা জেলার সকল স্তরের শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন,
১. চাঁদাবাজি বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে অভিযান চালাতে হবে।
২. শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য বেতন ও সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সকল শ্রমিকের জন্য চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৪. শ্রমিকদের উপর হামলার বিচার করতে হবে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলকভাবে।
৫. শ্রমিকদের কল্যাণে প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন গঠনে সহযোগিতা করতে হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে যারা রিকশা টানে, স্টিয়ারিং ধরে, মাটি কাটে, চাল বোনে — সেই শ্রমিকরাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের রক্তের ওপর রাজনীতি চললেও তাদের মুখের দিকেই কেউ তাকাচ্ছে না।
আজ সময় এসেছে তাদের জন্য বাস্তব সংস্কার, আইনানুগ সুরক্ষা, এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের।
না হলে, শ্রমিকরাই একদিন এই ন্যায়বিচারের অভাবে এক অগ্নিসংগ্রামের সূচনা করবে।
প্রতিবেদন: ভোলা প্রতিনিধি
সম্পাদনা: [দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ ]
উপস্থাপন: শ্রমিক নেতা আলহাজ্ব জামাল সাহেবের পক্ষ থেকে।
Leave a Reply