দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ
বিশেষ প্রতিনিধি
মোঃ শাহিন হাওলাদার
কিশোরী প্রেমিকা ও যুবক প্রেমিক সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই-বোন। মাস কয়েক পূর্বে প্রেমের টানে তারা দু’জনেই পালিয়েছিলো। এ ঘটনায় প্রেমিকা কিশোরীর মা বাদি হয়ে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানায় দায়ের করেন অপহরণ মামলা। পুলিশ পলাতক প্রেমিক-প্রেমিকাকে বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তাদের আদালতে সোর্পদ করা হলে বিচারক ওই কিশোরীকে তার মায়ের জিম্মায় এবং প্রেমিককে অপহরণ মামলায় জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে সন্তানকে জেলহাজত থেকে বের করতে তার মা অর্থ জোগাড় করতে বরিশাল আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার সামনে ভিক্ষা শুরু করেছনে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভুতেরদিয়া গ্রামের আকন বাড়ি ও তার পার্শ্ববর্তী হাওলাদার বাড়ির মামাতো ফুফাতো ভাই-বোনের প্রেম কাহিনীর মধ্যদিয়ে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুগঞ্জ থানার এসআই মফিজুর রহমান বলেন, কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় তার মা আছিয়া বেগম বাদি হয়ে চলতি বছরের ২৩ জুন একই গ্রামের মাজাহারুল ইসলামকে (২১) আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে তদন্ত চালিয়ে দুইজনকে বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকা থেকে উদ্ধারের পর উভয়কে আদালতে সোর্পদ করা হয়। এরপর ওই কিশোরীকে তার মায়ের জিম্মায় ও মাজাহারুল ইসলামকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। তবে প্রেমের টানে তারা পালিয়েছিলো বলে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদির স্বামী দুই বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। পারিবারিকভাবে বাদির সাথে আসামির সু-সম্পর্ক। আত্মীয়তার সুবাদে একে অপরের বসতঘরে আসা যাওয়া ছিল। গত ১৪ জুন বিকেলে বাদি তার বড় মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সুবাধে আসামি ঘরে থাকা তার মেঝো মেয়েকে মাহিন্দ্রা গাড়িতে উঠিয়ে জোরপূর্বক অপহরন করে নিয়ে যায়।
আসামি মাজাহারুল ইসলামের মা মাহিনুর বেগম বলেন, আমার ছেলে ও আমার ফুফাতো ভাই মৃত আলতাফ হোসেনের কিশোরী কন্যা (১২) একে অপরকে ভালোবাসতো। যা এলাকার সবাই জানে। তাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে দুইজনকেই মারধর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী এই ছেলেকে এক বছর বয়সের সময় ফেলে রেখে চলে গেছে। সংসারে দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিবাহ হয়েছে। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে পাওয়া পাঁচ শতক জমির মধ্যে বসতঘরের উপরে পলিথিন ও পাশে কাগজসহ পুরাতন টিনের বেড়া দিয়ে বসবাস করে আসছি। স্বামী জীবিত না মৃত আছেন তাও জানি না। আমার ছেলে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করা একটি বাসের হেলপার।
আগে আমি অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতাম। বয়স বেড়ে যাবার পাশাপাশি নানারোগে অসুস্থ হওয়ায় এখন আর অন্যের বাসায় কাজ করতে পারি না। তাই ছেলের আয়ের অর্থে সংসার চলত। এখন ছেলে জেলহাজতে তাই ভিক্ষা করে টাকা যোগার করতেছি। কারণ উকিলগো (অ্যাডভোকেট) কাছে গেলে আমার ভিক্ষা করা পাঁচশ’ দুইশ’ তিনশ’ করে টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু আমার ছেলে জেল থেকে বের হয় না। তবে নতুন করে একজন উকিল পেয়েছি তিনি এখন পর্যন্ত কোন টাকা পয়সা চায়নি।
ভিকটিম ওই কিশোরী বলেন, মীরগঞ্জ ঘুরতে নেয়ার কথা বলে মাজাহারুল আমাকে বরিশালের একটি বাসায় নিয়ে নয়দিন রেখেছে। তবে এই নয়দিনে মাজাহারুল কোনো নির্যাতন করেননি বলেও ওই কিশোরী উল্লেখ করেন।
পালিয়ে থাকা ওই প্রেমিক-প্রেমিকা উঠেছিলেন বরিশাল পলাশপুরে বসবাস করা ময়না বেগমের ঘরে। তিনি (ময়না) বলেন, মাজাহারুল ইসলামের সাথে আসা মেয়েটি অপহরণ করে আনা হয়েছে এমন ভাব ছিলনা। কারণ কিশোরী মেয়েটি ছিল একদম মুক্ত। কিশোরীকে অপহরণ করা হলে সে এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারতো। কারণ- ওই মেয়েকে বাসায় রেখে কর্মে যেতো মাজাহারুল। আর রাতে মেয়েটি থাকতো আমার সাথে। তবে দিনে ও সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত মাজাহারুল আসা যাওয়া করতো।
ময়না আরো বলেন, মেয়েটির বয়স কম দেখে আমি প্রশ্ন করেছি তুমি মাজহারুলকে ভালোবাসলেও তোমারতো বিয়ের বয়স হয়নি। তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও। উত্তরে ভিকটিমের জবাব ছিল-আমার বড় বোনকে মা বিক্রি করে ফেলেছে। তার কাছে থাকলে আমার অবস্থাও বড় বোনের মত হবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাজাহারুল ইসলামের মা মাহিনুর বেগম বলেন, আমার ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ওই মেয়ের প্রেম ভালোবাসার সব তথ্য ছিল। পুলিশ সেই ফোন থেকে সব তথ্য মুছে ফেলেছে। কারাগারে দেখা করতে গিয়ে ছেলের মুখে এ কথা শুনেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাকে এক পুলিশ বলেছিল, আমাগো কিছু টাকা পয়সা দেন। কিন্তু তাদের কোন টাকা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সত্য ঘটনা জেনেও বাদিকে দিয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে অপহরন মামলা করিয়েছে।
মাহিনুর বেগম বলেন, আমার শেষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাঁচ শতক জমি বিক্রি করে ছেলেকে মুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অনেকে। আমার সন্তান জেলহাজতে থাকায় আমি ভিক্ষা করে জীবন যাপন করছি এবং ছেলেকে মুক্ত করার জন্য ভিক্ষা করে অর্থ যোগার করছি।
Leave a Reply