✍ রেশমা চৌধুরী
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হারে এক ভয়াবহ ডিজিটাল নিপীড়নের রূপ নিচ্ছে তথাকথিত “মব ভাইরাস”—যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকের অপব্যবহারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাধারণ নাগরিক এমনকি বর্তমান সরকারও এই ডিজিটাল সন্ত্রাস থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, অতীতের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সংবাদ সংগ্রহের সময় বা সৌজন্যমূলক মুহূর্তে তোলা ছবি এখন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে জনমনে বিভ্রান্তি ও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জনরোষ, বিভ্রান্তি, সামাজিক হেয়তা এবং অনেক ক্ষেত্রেই সহিংসতা।
১. পুরনো ছবি বিকৃত ব্যবহার:
সংবাদ কভারেজ বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ছবি ভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ভুয়া প্রোফাইল ও পেজ:
ফেসবুকের নামহীন বা বেনামী আইডি থেকে সাংবাদিক ও নেতাদের ছবি ও তথ্য বিকৃত করে ছড়ানো হচ্ছে।
ডক্টরড ছবি ও মিথ্যা ক্যাপশন:
ছবি এডিট করে, মনগড়া গল্প জুড়ে দেওয়া হচ্ছে—যা দেখেই জনতা বিভ্রান্ত হচ্ছে।
ভাইরাল মোডে ‘মিডিয়া-বোমা’:
হঠাৎ একটি বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল করে জনমত গঠন বা কাউকে টার্গেট করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা,৩১ আগস্ট, গাজীপুর:
এক সাংবাদিকের ছবি ভুয়া আইডি থেকে ছড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হয়। তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
রাজশাহী ও রাজবাড়ী:
খানকা শরিফ ও মাজারে হামলা হয়। ঘটনার উৎস ছিল বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্ট।
সাভার ও আশুলিয়া:
সাংবাদিকদের ছবি পোস্ট করে ‘দালাল’ আখ্যা দিয়ে মব তৈরি করা হয়, যা শারীরিক হেনস্তা পর্যন্ত গড়ায়।
একজন চাকরিজীবীর পারিবারিক অনুষ্ঠানের ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হয়, যার ফলে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়।
কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন
আমরা কোনো দলের নই। কিন্তু ফেসবুকে ছবি দেখিয়ে আমাদের কে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলা হয়েছে।”
বরিশাল কোডের একজন চাকরিজীবী জানান—
পারিবারিক ছবি হঠাৎ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে এমন লেখা জুড়ে দেওয়া হয় যা আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা বলেন—
জনগণের সঙ্গে তোলা ছবি থেকেই বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে। এতে ব্যক্তি ও সরকার—দুইয়েরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”
সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্বে সব সরকারের আমলে, সব দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ছবি তোলা বা মিটিং কভার করেছেন।
বহু সাংবাদিক সংস্থার দায়িত্ব পালন, নিউজ কভারেজ, বা মালিকপক্ষের আদেশে সরকারের প্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। আজ সেই প্রেক্ষাপট বিগত সরকারের পতনের পর ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এদিকে উক্ত বিষয়ে গুলিতে সরকার ও প্রশাসনও বাদ যাচ্ছে না
মব ভাইরাস’ কেবল সাংবাদিকদেরই নয়, বরং সরকারের ভাবমূর্তিও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মিটিং, সমাবেশ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানের ছবি বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এতে করে জনমনে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস বাড়ছে, যার সুযোগ নিচ্ছে সরকারবিরোধী অপশক্তি।
বাংলাদেশে ৫ কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী
যাচাই না করে মানুষ ছবি/তথ্য শেয়ার করছে
গুজব ও রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে বিষয়টি আগুনের মতো ছড়াচ্ছে।
উক্ত বিষয়ে টাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি আওরঙ্গজেব কামাল বলেন -মব ভাইরাস” এখন আর কেবল একটি ফেসবুক ফেনোমেনা নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার হুমকি।
এখনই সুনির্দিষ্ট আইন, সামাজিক সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি দমন না করা গেলে সামনে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির উপর বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
Leave a Reply