বাহাদুর চৌধুরী
প্রধান পরিদর্শক, বাংলাদেশ জাতীয় সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ
বাংলাদেশের গণমাধ্যম জাতীয় উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সত্য প্রকাশের অন্যতম প্রধান শক্তি। কিন্তু বাস্তবে মাঠ পর্যায়ের অসংখ্য সাংবাদিক আজ অবহেলা, শোষণ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে কিছু পত্রিকার প্রতিনিধি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চলছে চরম অনিয়ম, অস্বচ্ছতা এবং সাংবাদিকতার নামে অর্থ বাণিজ্য।
বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে—একই পত্রিকার ১০–১৫ জন প্রতিনিধি একসাথে নিয়োগ পাচ্ছেন, অথচ সারা বছর পত্রিকাটি বাজারে পাওয়া যায় না, অনলাইন পোর্টালেও তাদের কোনো খবর নেই।
তবে ফেসবুক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হয়, আর নিয়োগের পর সাংবাদিকদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়—
“সদস্যপদ নবায়ন”
“প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী”
“বিশেষ দিবস”
এমনকি সরাসরি বলা হয়— “সাংবাদিক পরিচয় রাখতে হলে টাকা দিতে হবে”।
এটি কেবল অনৈতিক নয়—গণমাধ্যমের নৈতিকতার উপর প্রকাশ্য আঘাত।
অনেক পত্রিকার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনুমোদিত সাংবাদিকদের নাম, ছবি ও যোগাযোগের তথ্য প্রকাশ করা হয় না। ফলে মাঠে কাজ করার সময় পুলিশ বা প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় প্রমাণ করতে না পেরে অনেক সাংবাদিক অপমান, হয়রানি ও আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ছেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে—সংবাদের কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে সাংবাদিকরা হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তখন বহু সম্পাদক–প্রকাশক ফোন ধরেন না, এমনকি বলে দেন— “তিনি আমাদের প্রতিনিধি নন”।
এতে সাংবাদিকরা একা আইনি ও সামাজিক চাপের মুখে পড়েন, আর দায়িত্বহীন সম্পাদক–প্রকাশক নিরাপদে থাকেন।
বর্তমান আইন ও গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী—
1. সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র অবশ্যই পত্রিকার নিজস্ব ফরম্যাটে দিতে হবে।
2. অনুমোদিত সাংবাদিকদের নাম, ছবি ও যোগাযোগের তথ্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ বাধ্যতামূলক।
3. মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্পাদক–প্রকাশকের আইনগত দায়িত্ব।
বাংলাদেশ জাতীয় সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি—
প্রতিনিধি নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সকল অনুমোদিত সাংবাদিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
যে কোনো অজুহাতে সাংবাদিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশাসনিক বা আইনি সমস্যায় সম্পাদক–প্রকাশকের সরাসরি দায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক আমাদের দেশ বর্ণ অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদক আলহাজ্ব মোরশেদ স্যারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন—
আমরা মাঠে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি, কিন্তু বিপদে পড়লে যদি নিজের পত্রিকার পরিচয়ও প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে সাংবাদিকতা পেশা অর্থহীন হয়ে যাবে।
সাংবাদিকরা দেশের জন্য সত্য তুলে ধরেন, আর সম্পাদক–প্রকাশকরা সেই কাজের জন্য প্ল্যাটফর্ম দেন। কিন্তু যদি সেই সম্পর্ক শোষণ, অনিয়ম ও অবহেলায় ভেঙে যায়—তাহলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
এখনই সময়—সকল সম্পাদক ও প্রকাশককে সৎ, দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণে ফিরিয়ে আনা। তাহলেই দেশের প্রতিটি সাংবাদিক নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও মাথা উঁচু করে কাজ করতে পারবেন।
Leave a Reply