সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী,
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানাধীন খেজুর গাছিয়া পর্যটনকেন্দ্রের পাশ দিয়ে বিস্তৃত বেরি পার্টি (নিরাপত্তা বাঁধ) বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মাত্র দুই মাস আগে করা আংশিক সংস্কার কাজের স্থায়িত্ব না থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন অংশে ফাটল, ধস এবং নিচু এলাকায় পানির চাপে ভাঙনের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই বেরি পার্টি শুধু পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াত নয়, পাশ্ববর্তী হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা এবং সম্পদের নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ ঢাল হিসেবে কাজ করে আসছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিকটুভাবে ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে করা সংস্কারকাজ এখন পুরো এলাকার জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
খেজুর গাছিয়া সংলগ্ন বেরি পার্টিটি যদি এবার ভেঙে পড়ে, তাহলে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হবে। বসতভিটা, ফসলি জমি, বাজারঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো এলাকা পানির নিচে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার গরু, ছাগল, মহিষসহ গবাদিপশু স্রোতের টানে সাগরে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য এক অসহনীয় অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনির মাঝি বলেন, “বাঁধটা আমাদের শেষ ভরসা। এখানে কোনো বড় জোয়ার বা সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই এই বেরি পার্টি ধসে পড়বে, তখন আমরা বাঁচব কীভাবে?”
রবিন সাহা বলেন, “গত বারের সংস্কার কাজে আমরা নিজেরাই শ্রম দিয়েছিলাম, দেখেছি কেমন নড়বড়ে কাজ করেছে। পানি ঠেকানোর মতো শক্তি এই বাঁধে নেই। আমরা বারবার বলেছি, শুনেছে কেউ?”
কাজ ছিল দায়সারা এবং লোক দেখানো। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও অদক্ষ জনবল দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে ফটোসেশন করে চলে গেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটাতেই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ধস দেখা দিয়েছে।
একজন মানবাধিকার কর্মী সেনাবাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চৌধুরী বলেন, “শুধু কাগজে কলমে উন্নয়ন দেখিয়ে এলাকাবাসীকে বিপদে ফেলে রাখা হয়েছে। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।”
পর্যটনের পাশাপাশি কৃষি ও বাসস্থানের জন্যও বাধাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
খেজুর গাছিয়া ভোলা জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই স্থান পরিদর্শনে আসে। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষিজমি ও বসতভিটাগুলো সুরক্ষিত রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বেরি পার্টির ওপর ভরসা করে হাজার হাজার বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন কৃষকরা।
এলাকাবাসী প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত টেকসই এবং মানসম্পন্ন সংস্কার কাজের দাবি জানিয়েছেন। এই বাঁধটি নতুন করে পূর্ণ সংস্কার ও উঁচু করে মজবুতভাবে নির্মাণ না করা হলে, যেকোনো সময় এই এলাকায় ঘটতে পারে নজিরবিহীন বিপর্যয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বাজেট পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।”
চরফ্যাশনের খেজুর গাছিয়া বেরি পার্টির অবস্থা শুধু একটি বাঁধের দুরবস্থার গল্প নয়, এটি একটি এলাকার জীবন ও জীবিকার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সঠিক পরিকল্পনা ও দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, এই সমস্যা বড় ধরনের মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি— হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের জনসাধারণকে বাঁচাতে এই বাঁধটি টেকসই ও স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হোক।
Leave a Reply