মোহাম্মদ আলী, এল এল বি।
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ﴾
“নিশ্চয়ই মুসলমানগণ পরস্পর ভাই।”
(সূরা হুজুরাত: ১০)
আজকের বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে নানা দিক থেকে বিভক্ত ও দুর্বল করে ফেলার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলমান। একদিকে মতপার্থক্যের নামে বিভাজন, অন্যদিকে মাজহাব ও দলীয় পরিচয়ের অজুহাতে হৃদয়ের দূরত্ব—এসব আমাদের সেই ঐক্যকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে যা কুরআন আমাদের উপর অপরিহার্য করে দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই মুসলমানগণ পরস্পর ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে সংশোধন করো।” (সূরা হুজুরাত: ১০) এই আয়াত শুধু একটি আবেগময় ঘোষণাই নয়, বরং একটি শরঈ নির্দেশ। যখন আমরা ফিকহি মতানৈক্য, দলীয় মতভেদ বা কোন ব্যক্তিগত মতামতকে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের উপর প্রাধান্য দিই, তখন আমরা এই আয়াতের বিপরীতে অবস্থান করি।
ফিকহি মাসাইলের ভিন্নতা ইসলামে স্বীকৃত ও ঐতিহাসিক সত্য। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও মতপার্থক্য ছিল, কিন্তু তা কখনো তাদের হৃদয়ের বন্ধনে চিড় ধরাতে পারেনি। তারা মতভিন্নতার মধ্যে ওহীর প্রতি আনুগত্য ও একতা বজায় রাখতেন। আজ আমাদের উচিৎ—একটি বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি দেয়া: দ্বীনের দাওয়াত ছড়ানো, ঈমান ও আমলের পরিবেশ গড়া, মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্য, সহযোগিতা ও সম্মান বজায় রাখা। মতভিন্নতা হোক রহমত, বিভেদ নয়। আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীনের ইজ্জতকে মুখ্য করি, তাহলে ফুরুই বিষয়ের ভিন্নমত আমাদের বিভক্ত করবে না বরং পরিপূর্ণতা এনে দেবে।
আমরা যেন ভিন্নমতের ব্যবস্থাপনাকে শিষ্টাচার, জ্ঞান ও সম্মানচর্চার মাধ্যমে গ্রহণ করি এবং তা যেন বিভেদের না হয়ে বরং আল্লাহর জমিনে দ্বীনের কাজকে জোরদার করার এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়। মতানৈক্য হোক হৃদ্যতার ভিতর, বিদ্বেষ ও গোঁড়ামির বাইরে।
আসুন, আমরা সেই কুরআনের আহ্বানে সাড়া দিই—ভাইয়ের মত মিলেমিশে, উদারচিত্তে, শরিয়তের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঐক্যের পথে অগ্রসর হই। আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তা নয়, বরং উম্মাহর কল্যাণই হোক আমাদের দ্বীনি কর্মের মানদণ্ড।
Leave a Reply