✍️ নিজস্ব প্রতিবেদক | বোরহানউদ্দিন, ভোলা
ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৯নং বড় মানিকা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী কর্মকর্তা শাহ্ সুজা (সিকদার) এর বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি সেবাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি ঘুষ-নির্ভর কাঠামো, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নামজারি ফি যেখানে সরকারি নিয়মে ১,১৭০ টাকা, সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৭,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত। ফি নির্ধারিত নয় বরং ‘অফিস কর্মকর্তার ইচ্ছেমতো’ নির্ধারিত হচ্ছে। ঘুষ না দিলে কিংবা প্রশ্ন তুললে, সেবা প্রত্যাশীদের বরিশাল কিংবা জেলা রেকর্ড রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে—একপ্রকার ‘ঘুরপথে হয়রানি’।
একটি সাধারণ খতিয়ানের ফটোকপি তুলতে দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও এই ফটোকপি সরকারি ফি মাত্র কয়েক টাকা। খাজনা প্রদানেও চলছে প্রতারণা—৫০ থেকে ২০০ টাকার খাজনা কেটে নেওয়া হচ্ছে ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত। অনলাইন সিস্টেমে ‘সমস্যা’র অজুহাত দেখিয়ে জনগণকে একাধিকবার অফিসে ডাকাও সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক অনিয়মের তথ্য জানতে গিয়ে এক সাংবাদিক জুয়েল মাস্টার ভূমি অফিসে গেলে তাকেও হেনস্তার শিকার হতে হয়। সরকারি তথ্য জানার অধিকার চর্চা করতে গিয়েই অপমানিত হতে হয়েছে তাকে। এটি গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
জানা যায়, শাহ্ সুজা ও তার সহকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে একই অফিসে কর্মরত রয়েছেন, যা সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, এক কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় ধরে কর্মরত থাকা নিষিদ্ধ। তবে কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছত্রছায়ায় তারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন এই অনিয়ম।
স্থানীয়দের মতে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারি চাকরির সুবাদে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে বেনামে জমি, বাড়ি ও ব্যবসার তথ্য। তদন্ত করলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বড় মানিকার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কুতুবা ও পইক্ষা ইউনিয়নের ভূমি অফিসেও একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণ জমির মালিকরা অফিসে গিয়ে পড়ছেন ঘুষ ও হয়রানির জালে। এমনকি, বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসেও একই রকম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তের মাধ্যমে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু বিচার এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক ভূমি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যথায় জনগণের আস্থা হারাবে রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত—ভূমি অফিস।
Leave a Reply