মোঃ বিজয় চৌধুরী, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে এমন একজন শিক্ষক থাকেন যিনি কেবল পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান দেন না, বরং তার ভেতরের মানুষটিকে জাগিয়ে তোলেন, আত্মবিশ্বাস গড়ে দেন এবং জীবনের পথে হাঁটার সঠিক দিশা দেখান। আমার জন্য সেই শিক্ষক ছিলেন মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন স্যার।
অধক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। যদিও তিনি পদমর্যাদায় গণিতের প্রভাষক, তবুও তিনি গণিত ছাড়াও জীববিজ্ঞান, রসায়ন এবং পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে পাঠদান করে থাকেন। এমন বহুমুখী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী শিক্ষক খুব কমই দেখা যায়। প্রতিটি বিষয় তিনি এমনভাবে শেখাতেন, যেন তা আমাদের মস্তিষ্কে নয়—হৃদয়ে গেঁথে যেত।
বিদ্যালয়জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ যখন পেছনে তাকাই, তখন স্যারের হাস্যোজ্জ্বল মুখ, ক্লাসে জটিল সমস্যার সহজ সমাধান, আর তাঁর সেই চিরচেনা বাক্য—”মনোযোগ দাও, তুমি পারবে”—সবকিছু যেন এখনো কানে বাজে। স্যার ছিলেন কঠোর, কিন্তু সে কঠোরতার ভিতরে ছিল ভালোবাসার গভীরতা। কোনো ভুল করলে ধমক দিতেন, কিন্তু পরে পাশে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন, যেন ভুলটা আবার না হয়।
প্রতিটি পরীক্ষার আগে স্যারের উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য আমাদের মাঝে সাহস জুগিয়েছে। জীবনের প্রতিটি বাঁকে স্যারের দেওয়া উপদেশ এবং শিক্ষার মূল্য আজ বুঝতে পারছি। তিনি আমাদের শুধু ছাত্র বানাননি, তৈরি করেছেন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ভিত।
আমার বিশ্বাস, মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন স্যারের মতো শিক্ষক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি ছিলেন আমাদের ব্যাচের অনুপ্রেরণা, ছায়াসঙ্গী এবং সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। অনেক সময় আমরা বুঝে উঠতে পারিনি স্যারের অবদানের প্রকৃত মূল্য, কিন্তু আজ এই বিদায়ের মুহূর্তে হৃদয়ের গভীরে তা উপলব্ধি করছি।
স্যার, আমরা যারা আপনার ছাত্র ছিলাম, তারা সবাই আজ গর্বিত। আপনি আমাদের জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়, যাকে কোনোদিন ভোলা সম্ভব নয়। আমি আজ যখন স্কুল জীবনকে বিদায় জানাচ্ছি, তখন এই লেখার মাধ্যমে আপনাকে জানাতে চাই—আপনি আমাদের শ্রদ্ধার আসনে চিরকাল অম্লান থাকবেন।
আপনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং শান্তিময় জীবন কামনা করছি। আপনি ছিলেন, আপনি আছেন, আপনি থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।
শিক্ষক কখনো শুধুই শিক্ষক নন—তিনি একজন জাতি নির্মাতা, ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণকারী। মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন স্যার তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
Leave a Reply