
বিশেষ প্রতিনিধি :
১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দখল ও প্রকৃত সাংবাদিকদের বঞ্চনার শিকার হয়েছে। এখনো তারই ধারাবাহিকতা অনেক ক্ষেত্রে বিধ্যমান রয়েছে। তারই দৃষ্টান্ত উধারন ঢাকা জেলা সমাজ সেবা অফিস। যদিও সাংবাদিক সংগঠন কে সমাজ সেবা নিবন্ধন দেওয়ার কোন অধিকার নেই। সাধারণভাবে “ঢাকা প্রেস ক্লাব” বা যেকোনো সাংবাদিক সংগঠন সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সমাজসেবা নিবন্ধন নিতে পারে না,কারণ এটি পেশাজীবী (Professional) সংগঠন, সমাজকল্যাণমূলক (Social Welfare) সংগঠন নয়। The Voluntary Social Welfare Agencies (Registration and Control) Ordinance, 1961
(“স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১”)এই আইনের ধারা ২(ডি) অনুযায়ী, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধন পেতে হলে সংগঠনকে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম (welfare activities) — যেমন দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও নারী উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী সহায়তা, ইত্যাদি — পরিচালনা করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রেস ক্লাব বা সমিতি সাধারণত এসব কাজ করে না, বরং সদস্যদের পেশাগত উন্নয়ন, সংবাদ প্রচার, অধিকার রক্ষা ইত্যাদি করে, যা সমাজকল্যাণমূলক কাজ নয়। বিষয়টি নিয়ে আমার একটু বলার উদ্দেশ্য এই ক্লাবটি নিয়ে সমাজ সেবা অফিস ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী কায়দায় পরিলালনা করছে। এবং একটি গ্রুপকে সকল সুবিধা পায়িয়ে দিয়েছে। শুধু বিগত পরিচালগুলি সরকারের তাবেদারিত্ব করার কারনে। যে জন্য এখনো প্রকৃত সাংবাদিকরা সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। সমাজ সেবার নিবন্ধন দেওয়ার অধিকার না থাকার সর্তেও ১৯৮৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকা প্রেসক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়, যার নিবন্ধন নম্বরআবারও ফ্যাসিবাদীদের দখলে পড়েছে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সাংবাদিক সংগঠন ঢাকা প্রেসক্লাব। গত ১৫-১০-২০২৫ইং তারিখে সন্পূর্ণ অবৈধ্য ভাবে আওয়ামীলীগের দোসর দিপংঙ্কর গৌতম ও পাভেল গ্রুপ কে ঢাকা জেলা সমাজসেবা থেকে অনুমোদন দিয়েছে। যেটা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দেশের সাংবাদিক মহল। বিগত দিনে সমাজ সেবার নিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থেকে প্রকৃত সাংবাদিকদের কাছ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ২০০৯ সাল
থেকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় ঢাকা প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ও আওয়ামী লীগের সহযোগী কিছু
ব্যক্তি। তাদের দখলদারিত্বের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা সংগঠনের কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকা প্রেসক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়, যার নিবন্ধন নম্বর ঢ-০২০২৯। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম দিলদার, যিনি বর্তমানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি নিয়মিতভাবে প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন আয়োজন করে আসছিল এবং নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্ত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সরকারে যোগ দেন এবং সমাজ সেবার সভাপতি নির্বাচিত হয় পরবর্তীতে তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী হন । বর্তমানে তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালে তারই ঘনিষ্ঠ সহচর ও দীপঙ্কর গৌতম ও সাদেক মাহমুদ (পাভেল) সহ কিছু আওয়ামীলীগ নেতা কর্মি ঢাকা প্রেসক্লাব জোর করে দখল করে নেন। তারা সংগঠনের পুরনো নথি ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট গায়েব করে দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি অনুমোদন নেন। অথচ তার কখনো ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য ছিলেন না। আর সমাজ সেব সে ধরনের কোন কাগজ দেখাতে পারবে না।২০০৯ সালের পর থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর কাগজে-কলমে কমিটি নবায়ন করলেও কোনো কার্যকর কর্মকাণ্ড তারা পরিচালনা করেননি। ২০০৯-২০১১, ২০১১-২০১৩, ২০১৩-২০১৫, ২০১৫-২০১৭, ২০১৯-২০২১, ২০২১-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৫ পর্যন্ত এই কমিটিগুলোর কার্যক্রম কেবল নথিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রকৃত সাংবাদিকদের কোনো সম্পৃক্ততা বা সাধারণ সদস্যদের কোনো ভূমিকা ছিল না। এ বিষয়ে সমাজ সেবার নিকট বহুবার আবেদন করেছে অনেক সাংবাদিক বা সদস্য। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নিলেও, শেষ পর্যায়ে এসে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তদন্ত ভেস্তে যায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবারই রাশেদ খান মেননের সরাসরি হস্তক্ষেপে তদন্ত প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা বিগত প্রতিটি কমিটির সুপারিশ থেকে জানতে পারবেন। এই দীর্ঘ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে আওরঙ্গজেব কামালের নেতৃত্বে প্রকৃত সাংবাদিকদের একটি শক্তিশালী ধারা গড়ে ২০০৭ সাল ওঠে। এবং দুই শতাধিক পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক একত্রিত হয়ে ঢাকা প্রেসক্লাবকে পুনর্গঠন ও সাংবাদিকদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত আন্দোলন শুরু করেন। বর্তমানে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেশব্যাপী চলমান। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে উক্ত ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অনেকেই পলাতক। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনের সময় তারা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে। রাশেদ খান মেনন পালিয়ে যাওয়ার পর তার সহচর দীপঙ্কর গৌতম ও সাদেক মাহমুদসহ অনেকে আত্মগোপনে চলে যান এবং এখনো বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে কারনে ঢাকা প্রেস ক্লাব কে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। এবিষয়ে
একাধি সাংবাদিদের নিকট জানতে চাইলে তারা ফ্যাসিবাদী কমিটির বিরুদ্ধে নানা বিধ অভিযোগ করেন। এবিষয়ে কেএম মোহম্মাদ হোসেন রিজভী বলেন,আমি এক জন প্রবিন সাংবাদিক জাতীয় দৈনিক বাংলার দূত পত্রিকার যুগ্ন-সম্পাদক হিসাবে কর্মরত রয়েছি। এছাড়া দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকা প্রেস ক্লাবের সাথে যুক্ত রয়েছি। কিন্ত সমাজ সেবা আমাদের নাম অন্তর ভূক্ত করতে চায় না। আমি বর্তমান ফ্যাসিবাদী কমিটির বিরুদ্ধে ২৬-১০-২০২৫ ইং তারিখে লিখিত ভাবে সমাজ সেব মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দাখিল করি। এর আগেও গত ২০-১০-২০২৫ ইং তারিখে জেলা সমাজ সেবা অফিসে আর একটি অভিযোগ দাখিল করি। কিন্ত বিষয়টি কোন ভাবে আমলে নেয়নি কতৃপক্ষ । আমার অভিযোগ ১. জোরপূর্বক প্রেসক্লাব দখল ও দীর্ঘদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখ ওবারবার একই ব্যাক্তি কে অবৈধ্য ভাবে কমিটি প্রদান। ২. কোনো নিয়মিত নির্বাচন না করা বা প্রকৃত সাংবাদিকদের সংযুক্ত না করা। ৩. কমিটির সকল সদস্য পূর্ববর্তী কোনো বৈধ কমিটির বা ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য না থাকা। ৪. সংগঠনের কার্যক্রম বা সভা-মিটিং সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এবং সাংবাদিকদের বিপদে সাহায্য ও সহযোগীতা না করা। ৫. সমাজসেবার নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম না চালানো। এবং আওয়ামীলীগ ও তাদের দলীয় লোক দিয়ে সদস্য কোট পূর্ণ করা। ৬. ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে পুরনো কোনো নথি পাওয়া যায়নি। এক কথায় পূর্বের নথী গায়েব করা। ৭. সংগঠনটিকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা। বর্তমানে অওয়ামীলীগকে পূর্ণবাসিত করা। ৮. ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দলের সরাসরি সহযোগী হিসেবে কাজ করা সহ নানা বিধ বিষয় রয়েছে। এই দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দখলদারিত্ব ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সাংবাদিক সমাজে বিভাজন, বিশৃঙ্খলা ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ঢাকা প্রেসক্লাব এখন ঐক্য ও সংস্কারের জন্য নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায়। আমাদের দাবী ঢাকা জেলা সমাজ সেবা উক্ত কমিটি বাতিল ঘোষনা করে ফ্যাসিবাদীদের এই সংগঠন থেকে বহিস্কার করে। সকল সাংবাদিক নিয়ে নতুন করে জুলাই গণঅভ্যুথানের মর্জাদা রক্ষার্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কমিটি উপহার দিয়ে সাংবাদিক সমাজ কে এই বিপদ মুক্ত করবেন। প্রকৃত সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বচ্ছ পদক্ষেপে যদি দখলদারদের অপসারণ নিশ্চিত করা যায়, তবে বহু বছরের বঞ্চনা ও বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে ঢাকা প্রেসক্লাব আবারও সত্য, ন্যায় ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতীক হিসেবে ফিরে আসবে। এ বিষয়ে ঢাকা প্রেস ক্লাবের একটি গ্রুপের সভাপতি বলেন,আমি ১৯৯০ সাথে ঢাকা প্রেস ক্লাবে যুক্ত হয়। আমি ১৯৯৩ সালে স্থায়ী সদস্য পদ পায়। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর সব কিছু ঠিকঠাক ছিল কিন্ত ২০০৯ সালের পর থেকে এই ক্লাবটি চলে যায় দখলদারদের কবলে। ফলে ২০০৯ সাল থেকে দুইশতাধিক সম্পাদক ও ৫ শতাধিক প্রকৃত সাংবাদিক নিয়ে ঢাকা প্রেস ক্লাব উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। তার পর থেকে দেশ ব্যাপী ঢাকা প্রেস ক্লাব প্রসারিত করি। বর্তমানে ঢাকা প্রেস ক্লাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অনেক সাংবাদি যুক্ত হয়েছে। সমাজ সেবার নিবন্ধনের ষাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। ওরা ঢাকা জেলার মধ্যে কাজ করে আর আমরা দেশে ও দেশের বাইরে কাজ করি। আমার জানামতে সমাজ সেবা সাংবাদিক সংগঠনের নিবন্ধন দিতে পারে না। যে কারনে আমি প্রকৃত সাংবাদিকদের নিয়ে দুই বছর পর পর গণতান্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করি। এবং সাংবাদিকদের সকর বিপদে সভাসমবেশ ও দাবী আদায়ের চেষ্টা অব্যহত রেখেছি। তবে ঢাকা প্রেস সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে সমাজ সেব যদি উদ্যেগ নেয় তাহলে আমি তাদের সাথে রয়েছি। এই সংগঠনে একাধিক গ্রুপ তৈরী হয়েছে। আমি বলবো সমাজ সেবা সকল সাংবাদিকদের নিয়ে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন ফ্যাসীবাদীমুক্ত কমিটি উপহার দিবে। অন্যথায় নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
Leave a Reply