1. mh01610093622@gmail.com : dainikdakshineroporadh :
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

যুব সমাজের অবক্ষয়ের কারণ

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৪ মে, ২০২৫
  • ২৯ বার ভিউ

মোঃ ইকরাম

একটি সমাজ ও একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যত সম্পদ হলো তরুণ সমাজ। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি-সমৃদ্ধি নির্ভর করে তরুণ সমাজের ওপর। যেকোনো জাতির প্রাণশক্তি তাদের যুবসমাজ। যুবসমাজই জাতির আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক।
যুবকদের প্রেমময় রূপ ও শক্তির কারণে দরিদ্র, নিঃসহায় প্রবঞ্চিত ও নিগৃহীত জনতা লাভ করবে নতুন জীবন, প্রদীপ্ত হবে নব উদ্দীপনায়। কিন্তু সম্প্রতি সেই যুবসমাজের প্রতি তাকালে জাতিকে অবাক হতে হয়। কারণ দেশ ও জাতির কর্ণধার সেই যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তাদের অনেকেরই নৈতিক কিংবা সামাজিক মূল্যবোধ নেই। এই যুবকদের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত, কেউ অসামাজিক, কেউ চাঁদাবাজি, কেউ অস্ত্রবাজি, কেউ চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, প্রভৃতি অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত। নানাবিধ কারণ (যেমন- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য, চাকরিক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, অপসংস্কৃতি, অভিভাবকদের আদর্শহীনতা, সমাজপতিদের অনৈতিকতা, অর্থ, অস্ত্র ও ক্ষমতার লোভ এবং বেকারত্ব) সেই যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে নিপতিত করছে। আমাদের যুবসমাজ আজকে শৃঙ্খলাহীন এক অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা এমন এক রীতিনীতিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে, যা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন বিকাশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ অনবদ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। কিন্তু না, যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ হবার কথা, দেখা যায়, সেই ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায়, প্ররোচনায়ই যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার ঘটছে। সেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিরাই লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঢাকঢোল পিটিয়ে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার ঘটান। একজন রাজনৈতিক নেতা, তিনি আগামীতে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, কিন্তু তিনি জনগণের কাছে পরিচিত নন। জনগণের কাছে পরিচিত হবেন কিভাবে? তিনি তার পরিচিতির জন্য যা করেন, তা হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকার যুবসমাজের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা দেবেন খেলাধুলা ও গান-বাজনার আয়োজন করার জন্য।নেতা টাকা দিয়েছেন খেলাধুলা ও গান বাজনার জন্য। খেলাধুলা বা গান-বাজনার আয়োজন করা হয়। প্রশ্ন হলো, সেখানে কি শুধু গান-বাজনা ও খেলাধুলা হয়? সেই গান-বাজনা ও খেলাধুলার নামে চলে নানা ধরনের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও জুয়া খেলা এবং মদ্যপান। এভাবেই যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটে। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো, যেসব নেতার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় রোধ হবার কথা, সেসব নেতার মাধ্যমেই যুবসমাজের অবক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এটা শুধু দুঃখজনক নয়; বরং জাতির জন্য কলঙ্কও বটে।টিভি, সিনেমা, ভিডিও, ডিস এন্টিনায় যেসব ছবি, নাচ, গান, কনসার্ট, রূপচর্চা, ফ্যাশন শো, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, বিনোদনমূলক কুরুচিপূর্ণ ছবি, প্রোগ্রাম, নাটক, ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে, তার অধিকাংশই জীবনধর্মী নয়; বরং তা আমাদের মন-মানসিকতার সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি আমাদের যুবসমাজকে দ্রুত অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ছবিই যুবসমাজকে বেশি আনন্দ দান করে বলে তাদের কাছে এগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়। এখন অনেক যুবক হাতে মেয়েদের মতো বালা পরে, মেয়েদের মতো মাথায় লম্বা চুল রাখে, পপ গান করে, ডিসকো নাচ নাচে, আর অদ্ভুত যতোসব পোশাক পরে। তাদের এসব আচার-আচরণ যেমন কুরুচিপূর্ণ, তেমনি অপসংস্কৃতির সহায়ক। আমাদের যুবসমাজ আজ এ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের মেয়েরাও আজ এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। তারাও সেই ছেলেদের মতো প্যান্ট-শার্ট পরে, চুল কেটে খাটো করে বব কাটে।
আধুনিক সোসাইটির নামে তারাও নাচ-গানের পার্টিতে যায়, মধ্যরাত পর্যন্ত পার্টিতে কাটায়, মদ্যপান করে, সিগারেট খায়, তাস খেলে, সুইমিং পুলে পেন্টি ও টপ্স পরে জল কেলি করে। শরীর কসরতেও তারা যথেষ্ট এগিয়ে আছে। তারাও কুংফু, জু-ডু, কারাতে শিখেছে। বক্সিংয়ে অংশগ্রহণ করে পুরুষের পাশাপাশি তারাও আজ অপসংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসিয়েছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী লেখক-সাহিত্যিক নিজেদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ও স্বার্থ হাসিলের জন্য যৌন আবেদনময়ী কবিতা, গল্প, ঘটনা ও ছবি প্রকাশ করে যুবক-যুবতীদের বিপথগামী করে তুলছেন। এসব কাজে তারা শিক্ষিত সুন্দরী মেয়েদেরকে পর্যন্ত ব্যবহার করে এসব যুবক-যুবতীদেরকে অপসংস্কৃতির অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। আমাদের সমাজের জনগণের অসচেতনতা, অশিক্ষা, অজ্ঞতা, আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও দুর্নীতি, ইত্যাদির কারণে এই নৈতিক অবক্ষয়ের করালগ্রাসে নিপতিত হচ্ছে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজ।কলেজ-ভার্সিটিতে ছাত্রছাত্রীদের অবাধ চলাফেরা যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে চরমে পৌঁছিয়ে দিচ্ছে। ছাত্রছাত্রীর এরূপ অবাধ চলাফেরা অব্যাহত থাকলে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা কখনও সম্ভব হবে না। অনেক মাতাপিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদেরকে দেখা যায় নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত।
পিতামাতা, শিক্ষক, অভিভাবককে নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত দেখলে আমাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। পিতামাতা, শিক্ষক ও অভিভাবক নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত থাকলে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করবে কারা? যুবসমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় দেশ ও জাতির জন্য চরম হুমকি। সেই যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে সকল কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসা আমাদের সকলের উচিত।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Desing & Developed BY ThemeNeed.com