মোঃ মনিরুল ইসলাম
সদর উপজেলা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছে উঠতি বয়সী তরুণ থেকে শুরু করে সাধারণ পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই মৃত্যু-মিছিল কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে আতঙ্ক।
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর, কর্মজীবী যুবক এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যদের। কেউ অফিস বা ব্যবসার কাজে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি, কেউবা ভ্যানে করে পণ্য নিয়ে বের হয়ে সড়কে নিথর দেহ হয়ে ফিরেছেন। পরিবারের এই মূল ভরসা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার। অথচ দুর্ঘটনার পরে এসব পরিবারে কেউ খোঁজও রাখে না—থেকে যায় নিঃসঙ্গ কান্না ও দীর্ঘশ্বাস।
একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি জানান, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন চোখে পড়ে দূরপাল্লার বাস, মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং মোটরসাইকেলের বেপরোয়া দৌড়। অনেকেই ট্রাফিক আইনকে তোয়াক্কা না করে গতি প্রতিযোগিতায় নামে। এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি ও পাল্লা দিয়ে চলা থেকেই অধিকাংশ দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা টার্নিং পয়েন্টে কোনও গতিরোধক চিহ্ন না থাকা, ট্রাফিক সংকেতের অভাব এবং মনিটরিং-এর ঘাটতি। তারা পরামর্শ দেন, এসব দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো নির্ধারণ করে সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে আরও কঠোরতা আনতে হবে।
একজন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য জানান, “আমার ভাই সকালে কাজে বের হয়েছিল, বিকেলে জানতে পারি সে আর নেই। একটা কাভার্ড ভ্যান তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আমাদের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিল সে। এখন আমরা কীভাবে বাঁচবো?”
কুষ্টিয়ার মানুষদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে—রাস্তায় বের হলেই যেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি। শুধু আইনি পদক্ষেপ নয়, চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের মাঝেও সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য প্রচারণা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখন সময় এসেছে কুষ্টিয়ায় সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবার। না হলে প্রতিদিনই বেড়ে চলবে এই নির্মম মৃত্যুর মিছিল।
Leave a Reply