
মোঃ রাকিব হাসান:কুড়িগ্রাম (রাজিবপুর) প্রতিনিধি
অগ্নিঝরা বিজয়ের মাসে জাতি আবার স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধের বীরকন্যা, বীর প্রতীক তারামন বিবিকে—যিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলা নারীর অদম্য শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন।
১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে জন্ম তারামন বিবির শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য, নদীভাঙন আর সংগ্রামের মধ্যেই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদারের মাধ্যমে তিনি যুক্ত হন ১১ নম্বর সেক্টরের ক্যাম্পে। শুরুতে রান্নার কাজ করলেও দ্রুতই তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তা দেখে তাকে রাইফেল ও স্টেনগান চালনা শেখানো হয়। অল্প দিনেই তিনি হয়ে ওঠেন যোদ্ধা।
তারামনের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। কখনো পাগলী সেজে, কখনো ভিখারি সেজে তিনি শত্রুশিবিরে প্রবেশ করে অস্ত্রের অবস্থান ও দুর্বলতা সংগ্রহ করতেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিবাহিনীর একাধিক সফল অপারেশন পরিচালিত হয়।
একবার সুপারি গাছে উঠে পাকিস্তানি গানবোট আসার খবর তিনি শনাক্ত করলে রক্ষা পায় পুরো মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প—যা তার প্রথম বড় বীরত্ব।
১৯৭৩ সালে তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হলেও দীর্ঘদিন তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৫ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তিনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান।
অসচ্ছলতা ও অবহেলার মধ্যেও তারামন বিবির ছিল না কোনো অভিযোগ। তিনি বলতেন—
“দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”
১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে বিজয়ের মাসেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি রয়ে গেছেন—বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের এক উজ্জ্বল আলোকস্তম্ভ।
Leave a Reply