
আওরঙ্গজেব কামাল :
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাস যতটা গৌরবের, ততটাই রক্তাক্ত। অধিকারের দাবিতে প্রতিটি পর্যায়ের রাজনৈতিক আন্দোলনেই নতুন প্রজন্মকে দিতে হয়েছে ত্যাগ, পরিবার হারিয়েছে সন্তান, শহর ও গ্রাম সাক্ষী হয়েছে সহিংসতার। তাই আজও যখন রাজপথে লাশ পড়ে, তখন প্রশ্ন জাগে—এই দেশের গণতন্ত্র কি সত্যিই মানুষের জীবন, স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হতে থাকবে? আর কত প্রাণ হলে বাস্তবে গণতন্ত্র কবে রুপ পাবে? প্রতিনিয়ত লেগেই রয়েছে মিছিল–সমাবেশে সংঘর্ষ,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি পরিস্থিতি,হতাহত তাজা প্রাণ। রাজনৈতিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য। রাজনৈতিক দলগুলি মধ্যে আস্থা ও সম্পর্খের ভাটা পড়েছে। সব মিলিয়ে রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমছে। রাজনীতির সংস্কৃতি অতীত ভুলের পুনরাবৃত্তির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে “লাশের উপর দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র”—শব্দবন্ধটি কেবল আবেগ নয়, বরং বাস্তব রাজনৈতিক বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি।গণতন্ত্র মানেই মতভেদ থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সেই মতভেদের মূল্য যদি হয় মানবজীবন, তবে সেটি কোনো গণতান্ত্রিক পথ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সমান দায়িত্ব—সহিংসতার এই চক্র ভাঙার। বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের যুদ্ধ সেই জন্ম থেকে এখনো আলোর মুখ দেখেনি। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর, স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দী—মোট প্রায় ৭৪ বছরের পথচলায় এই দেশের মানুষ কখনো শোষণের বিরুদ্ধে, কখনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, কখনো একদলীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থেকেছে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়—কেন আমরা এখনো প্রকৃত গণতন্ত্রের ঠিকানা খুঁজে পাইনি? কেন গণতন্ত্রের প্রতিটি বিজয় আবার হারিয়ে যায়? আগে আওয়ামীলীগ চাঁদাবাজি করেছে,গুম খুন করেছে। জুলাই অভ্যুথানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এ সব এখনো বন্ধ হয়নি। তাহলে জনগণের আর স্বস্তি কিসের। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, দলীয় রাজনীতি — এগুলো কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন নয়। দীর্ষ ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক দল বা সরকারই কিন্তু সমস্যার মূলে পরিবর্তন আনতে পারবে না, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হয়। স্ট্রোক করা গণতন্ত্র ও জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ কতটুকু বাস্তবায়িত হবে। বিগত সরকারের প্রায় ১৫ বছরের শাসনকালে রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এমনভাবে পুষ্ট হয়েছে যে অনেকেই তা-কে “গণতন্ত্রের স্ট্রোক” বলে অভিহিত করেছেন—যেখানে ভোট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী রাজনীতি, এমনকি মৌলিক মানবাধিকারও কার্যত প্যারালাইসিস বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেই পঙ্গু গণতন্ত্রকে বাঁচাতে সামনে এসেছে নতুন এক প্রজন্ম—আমরা যাদের বলি “জুলাই যোদ্ধা”। তারা যেন ফিজিওথেরাপি দিয়ে, নানান ধরনের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ওষুধ প্রয়োগ করে এই মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে আবার হাঁটতে শেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো— গণতন্ত্র কি সত্যিই নিজের পায়ে ভর করে নিজের ঠিকানায় পৌঁছতে পারবে, নাকি আবারও কোনো অদৃশ্য শক্তির হাতে বন্দী হয়ে পড়বে? গণতন্ত্রের উপযোগী প্রতিষ্ঠান, স্বচ্ছ নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক শাসন ও বিচারব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন। শুধু “নেতা পালানো” দিয়েই স্থায়ী শান্তি, ন্যায় বা স্থায়ী গণতন্ত্র আসে না। অভ্যুথান মানে যে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের নয় — সামাজিক প্রত্যাশা, বিচারবোধ, সুযোগ-সুবিধা, গণআস্থা প্রতিষ্ঠার চাহিদাও সৃষ্ট করেছে। জনগনের সে চাহিদা এখনো মেটানো যায়নি। যখন পর্যন্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকবে, তখন শুরু হওয়া গণআন্দোলন ও জনরোষ থামার নয়, বিকাশের সম্ভাবনাও রয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও: কেন এই অস্থিরতা? সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নয় বছরের সামরিক স্বৈরশাসন হটাতে যে গণআন্দোলন, মিছিল-শ্লোগান ও শহিদের রক্ত ঝরেছে, তা আজ ইতিহাস। এখনো জাতি নুরহোসেন দিবস পালন করছে। গত ১৭ বছরে গুম, খুন, ক্রসফায়ার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় অকালেই ঝরে গেছে অসংখ্য তরুণ প্রাণ। গণমাধ্যম ছিল কুক্ষিগত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিলোনা বললেও চলে। স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকের জীবন কি এভাবে অনিরাপদ থাকার কথা ছিল? কিন্তু গণঅভ্যুথান হয়েছে,ফ্যসীবাদী পালিয়েছে কই আমরা এখনো তো কিছুই পেলাম না। কোথায় গণতন্ত্র? এখনো প্রশাসন ঘুষবানিজ্য বন্ধ করেনি। সকল ক্ষেত্রে চলছে দূরর্নীতি তাহলে এত কিছু করে কি লাভ হল। কেন এত জীবনের বলিদান। আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে এই দেশটিকে মুক্ত করেছি একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে, যেখানে মানুষের ভোট ও মতের মূল্য থাকবে, জীবনের নিরাপত্তা থাকবে। কিন্তু আজও আমরা সেই স্বপ্নের কাছাকাছি ৫৪ বছরেও পৌঁছাতে পারিনি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের ক্ষমতার লিপসা। তাহলে আমি মনে করি এর জন্য দায়ী ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেত্রীত্ব। গণতন্ত্র এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে ক্ষমতার উৎস জনগণ, আর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। আমি মনে করি শুধু নির্বাচন হওয়া মানেই গণতন্ত্র নয়—মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের নিরাপত্তা রাজনৈতিক নিরপেক্ষ ভূমিকা হুমকির মুখে পড়েছে। একটি দেশের গণতন্ত্র পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আগে প্রয়োজন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা,নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা,আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা,শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা। এসব মিলেই প্রকৃত গণতন্ত্রের কাঠামো দাঁড়ায়। সংবিধানে গণতন্ত্রের যে কাঠামো রয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে হয়তো গণতন্ত্রের এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন – প্রস্তাবনায় ‘গণতন্ত্র’কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি রাখা হয়েছে ৫৬ ও ১৫৩ অনুচ্ছেদে—যেখানে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভা এবং সংসদের ভূমিকাকে নির্ধারিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন কমিশন সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিত করবে। ২৭ থেকে ৪৬ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার নিয়ে যেসব ধারা আছে, তা গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তি দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা? ৭০ অনুচ্ছেদ : গণতন্ত্রের ভিত না দুর্বলতা? ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদ সদস্য যদি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ভোট দেন, তবে তার সংসদ সদস্য পদ চলে যেতে পারে। ফলে,এমপিরা দলনেতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ভয় পান, সংসদে ভিন্নমত, বিবেক-নির্ভর ভোট, নীতি-নির্ভর বিভাজন—সব কিছুই কার্যত বন্ধ হয়ে যায়,সংসদ পরিণত হয় “সমর্থনের যন্ত্রে”, জবাবদিহির প্ল্যাটফর্মে নয়।এভাবে সংবিধানের কিছু ধারা গণতন্ত্রকে শক্ত করার বদলে কখনো কখনো “দলতন্ত্র” ও “ব্যক্তিতন্ত্র”কে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। যে কারনে জুলাই অভ্যুত্থান, জুলাই সনদ হয়তো এখন নতুন আশা জাগ্রত করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে প্রায় দুই হাজার শহিদের প্রাণ আর ত্রিশ হাজারের বেশি আহত বীর সৈনিকের আত্মত্যাগ—এ সবই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই সংগ্রামের ভেতর থেকে উঠে এসেছে একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার—“জুলাই সনদ”। কিন্ত এখন প্রশ্ন এটা বাস্তবায়ন করবে কারা। এই জুলাই সনদকে অনেকে নতুন গণতন্ত্রের মূলধারার ভিত্তি হিসেবে দেখছেন। তাই প্রশ্ন এখন – জুলাই সনদ কি পূর্ণ আলোর মুখ দেখবে? আর এর বাস্তবায়ন করবে কারা কিভাবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা কি এই সনদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে? আর যদি না করে তখন আবার কি হবে। জনগণ এই সনদের মাধ্যমে কতটুকু অধিকার পাবে, কতটুকু নিরাপত্তা ফিরে পাবে, কতটুকু প্রাণের মূল্য পাবে? জনগণের মধ্যে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এখন এই সব কথ গুলি। “জুলাই সনদ কি কাগজে থাকবে, নাকি বাস্তবে রাস্তায় নেমে আসবে? যদিও নতুন বাংলাদেশের নতুন স্বপ্ন, কিন্তু রক্ত এখনো শুকোয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষ নতুনভাবে একটি “নতুন বাংলাদেশ” দেখতে শুরু করেছে। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র,আইনের সমান প্রয়োগ,গুম-খুন ও দমনপীড়নমুক্ত রাজনীতি, মুক্ত সংবাদমাধ্যম এসবের একটি স্বপ্ন আঁকতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু সে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে এখনো প্রাণ দিতে হচ্ছে,এখনো রাস্তায় লাশ পড়ে থাকছে,এখনো চাঁদাবাজি, মারামারি, দখলবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হয়নি।মানুষের জীবন যেন এখানে এখনও সবচেয়ে সস্তা জিনিস—হায়রে বাংলাদেশ, এভাবে কি আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব? রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি : ইতিহাস কি শুধু একই নাটকের পুনঃমঞ্চায়ন?একসময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে নির্বাচনের সুযোগ দেয়নি—একপক্ষের অভিযোগ ছিল, নির্বাচন “একপাক্ষিক”জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল । আজ নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও অনেকে সেই একই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে—আবারও বিরোধী পক্ষের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন। আবারও “কে ভোট দিতে পারলো, কে পারলো না”—এ নিয়ে বিতর্ক। আবারও “রাষ্ট্রযন্ত্র কার পক্ষে, কার বিপক্ষে”—এ নিয়ে দোলাচল। একটি দল রাষ্ট্রের সম্পদ, সুযোগ-সুবিধা, লুটপাটের সব রাস্তা ব্যবহার শেষে বিদায় নেয়,তারপর অন্য একটি দল এসে আবার একই জায়গা থেকে শুরু করে—এই রাজনৈতিক রোলার কোস্টার থেকে দেশটি কবে মুক্তি পাবে এ প্রশ্ন সর্ব সাধারনরে ? এছাড়া নির্বাচন নিয়ে রয়েছে ভিন্নতা । অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হবে, নাকি তত্ত্বাবধায়ক ধরনের কোন নিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে হবে? এখানে কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়–(১) কেন প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা সংকট তৈরি হয়?।(২) কেন সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিয়ে অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন আয়োজন করা যায় না? (৩) যারা অপরাধী—তাদের বিচার অবশ্যই হবে; কিন্তু অপরাধ বিচারের নামেরাজনৈতিক প্রতিশোধের নামে অথবা নির্বাচন থেকে প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে “আইন”কে ব্যবহার করা কি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক নয়? বিভিন্ন মিডিয়ার অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায়, যেভাবে ক্ষমতার পালাবদলে একই ধরনের দমন-পীড়ন, গ্রেফতার, মামলার চিত্র দেখা যায়, আগে একটি দল যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে,এখন আরেকটি দল প্রায় একই কৌশল প্রয়োগের পথে হাঁটছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় –এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র কি কেবল “ব্যালটের ভাষায় প্রহসন”, নাকি সত্যিকারের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসাথে এটা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভিন্নতা রয়েছে।বর্তমানে আলোচনায় আছে—গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসাথে আয়োজনের । তাত্ত্বিকভাবে এটি গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় “সুযোগ” তৈরি করতে পারে, যেমন –জনগণ একই সময়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। পাশাপাশি গণভোটের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে সরাসরি মতামত দেবে।এতে “জনমতের প্রকৃত রূপ” বোঝা সহজ হতে পারে।কিন্তু প্রশ্ন হলো—শুধু একসাথে নির্বাচন আর গণভোট হলেই কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এসবের উত্তর স্পষ্ট নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায় ভোটের আগে, ভোট শুরু থেকে শেষ পয়ন্ত প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। মিডিয়া, পর্যবেক্ষক ও নাগরিক সমাজের জন্য তথ্য উন্মুক্ত থাকবে। নির্বাচনের স্বাধীনতা ও সব দলের সমান প্রচার সুযোগ দিতে হবে। ভয়-ভীতি, গ্রেফতার, হয়রানি ছাড়া ভোটার ও প্রার্থীদের আচরণ অস্ত্রবহুল সন্ত্রাসী পরিবেশ নয়, নিরাপদ ভোটকেন্দ্রের নিশ্চতা দিতে হবে। জনগণ যা রায় দেবে, ক্ষমতাসীনরা তাকে সম্মান করবে। গণভোটে যা সিদ্ধান্ত হবে, তা বাস্তবে আইনি ও প্রশাসনিকভাবে কার্যকর হবে ভিন্নমতকে “রাষ্ট্রদ্রোহ” নয়, “গণতন্ত্রের অংশ” হিসেবে গ্রহণ করা হবে যদি এসব পূরণ না হয়,আমার মনে তাহলে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসাথে হলেও তা গণতন্ত্রের “আবরণ” ছাড়া আর কিছুই হবে না।বাংলাদেশের জনগণ প্রশ্ন করতে করতে এখন এক ক্লান্ত ইতিহাসের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে—আমরা কি এমন এক রাষ্ট্র চাই, যেখানে ক্ষমতা পরিবর্তন মানেই প্রতিশোধ?ভিন্নমত মানেই শত্রু?নির্বাচন মানেই আশঙ্কা, সহিংসতা আর প্রাণহানি?নাকি আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে সংবিধান সত্যিই সবার জন্য সমান । আইন কারো হাতে “অস্ত্র” নয়, “আশ্রয়”গণতন্ত্র কেবল স্লোগান নয়,জীবনযাত্রার প্রতিটি স্তরে অনুভূত এক বাস্তবতা।জুলাই অভ্যুত্থান, জুলাই সনদ, শহিদের রক্ত—এসব কেবল ইতিহাসের পাতা ভরানোর জন্য নয়।এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশি জনগণ বারবার জীবন দিয়েছে,কিন্তু আর কতবার দিতে হবে, সেটার উত্তর এখন রাজনীতিকদের নয়,রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষমতাবান কাঠামোর সামনে রাখা জনগণের। আমার মতে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসাথে হওয়া অবশ্যই গণতন্ত্রের জন্য একটি সম্ভাবনার দরজা খুলতে পারে,কিন্তু সেই দরজা দিয়ে সত্যিকারের আলো ঢুকবে কি না,তা নির্ভর করবে —স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা ও বাস্তবায়নের সত্যিকারের রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির ওপর।যুদ্ধটা তাই এখনো শেষ হয়নি—এবার যুদ্ধ **গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে,ক্ষমতার নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে,আর বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রকে সত্যিকারেরজনগণের রাষ্ট্র বানানোর জন্য।
লেখক ও গবেষকঃ
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি
ঢাকা প্রেস ক্লাব।
Leave a Reply