মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসে লাখো দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে আখড়াবাড়ি পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো লালনভূমি ছেঁউড়িয়া।
দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ ছাড়াই দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-গুরু, বাউল-বাউলানি ও সাধারণ মানুষ ভিড় জমিয়েছে মরা কালী নদীর তীরে লালন মঞ্চে। শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ হলেও যানজটে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি।
এবার প্রথমবারের মতো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে তিরোধান দিবস উদযাপিত হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ভিডিও বার্তায় যুক্ত ছিলেন)। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং সংস্কৃতি সচিব মো. মফিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।
মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক ও গবেষক প্রফেসর গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।
মরা কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে বসেছে পাঁচ দিনের গ্রামীণ মেলা। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা হস্তশিল্প, বাদ্যযন্ত্র, গ্রামীণ সামগ্রী ও নানা ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে বসেছেন পসরা সাজিয়ে। পাশাপাশি আখড়াবাড়ির চারপাশে বসেছে সাধু-বাউলদের খণ্ড খণ্ড গানের আসর, যা উৎসবকে দিয়েছে বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের অনন্য মাত্রা।
ফকির লালন শাহের ভাব-জগতের গানে মিশে আছে মানবতা, প্রেম ও আত্মজ্ঞানের সাধনা। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে তাঁর গান মানুষের অন্তর ছুঁয়ে আসছে। আজও সেই মানবতার মরমি সুরে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া মুখরিত হয়ে ওঠে প্রতি বছরের মতো এবারও—ফকির লালনের তিরোধান দিবসে।
ছেঁউড়িয়ার বাতাসে আজও ভেসে বেড়ায় তাঁর সেই অমর বাণী মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।
Leave a Reply