মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের বিশেষ বরাদ্দের চাল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় উপজেলার ১৮টি পূজা মন্দিরে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ মন্দিরেই চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ দিয়ে ডিও পেপার সংগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়,বটকৃষ্ণ পাল (আহ্বায়ক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট কুমারখালী উপজেলা শাখা), রামদাস সরকার (সদস্য সচিব, কল্যাণ ফ্রন্ট কুষ্টিয়া জেলা শাখা), ঘন (সদস্য, কল্যাণ ফ্রন্ট কুমারখালী উপজেলা শাখা) ও সুজিত ঘোষ (সদস্য সচিব, কল্যাণ ফ্রন্ট কুমারখালী উপজেলা শাখা) — এই চারজন মিলে বিভিন্ন মন্দির থেকে ডিও পেপার নিয়ে সরকারি বরাদ্দের চালের বদলে ৫০০০ থেকে ৯০০০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে চাল আত্মসাৎ করেন।
হোগলা ঘোষপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরের সভাপতি আনন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন,আমাদের ৫০০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও বটকৃষ্ণ পাল ৯ হাজার টাকা দিয়ে ডিও পেপার নিয়ে নিয়েছে।”কয়া পালপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি শ্রীবাস ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক গোপী পাল বলেন,অষ্টমী পূজার দিন বটকৃষ্ণ পাল আমাদের উপজেলা অফিসে ডেকে নিয়ে একটি কাগজে সই করিয়ে ৮৫০০ টাকা দেয় এবং বলে এটি ব্যক্তিগত বরাদ্দ।”কল্যাণপুর দাসপাড়া মন্দিরের সভাপতি খোকন দাস জানান,প্রথম দফার চাল পেয়েছি, কিন্তু বিশেষ বরাদ্দের চাল পাইনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বটকৃষ্ণ পাল মাত্র ৫০০০ টাকা দেয়।”সরদারপাড়া সার্বজনীন রক্ষা কালী মন্দিরের সভাপতি তপন সরদার বলেন,চালের ডিও পেপারে সই দেওয়ার পর বটকৃষ্ণ পাল,রামদাস সরকার ও ঘন আমার কাছ থেকে কাগজ নিয়ে ৯ হাজার টাকা দেয়।
বটকৃষ্ণ পাল অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। রামদাস সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও চাল বা টাকার বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ঘন জানান,ঘটনাস্থলে ছিলাম, বটকৃষ্ণ আমাকে কিছু খরচ দিয়েছে।তবে সুজিত ঘোষ দাবি করেন,আমি উপস্থিত থাকলেও আর্থিক বিষয়ে কিছুই জানি না।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কুমারখালী উপজেলা শাখার সভাপতি চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শংকর মজুমদার বলেন, “আমরা বিষয়টি জেনেছি,মন্দির কমিটির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে সরকারি বরাদ্দের বড় অংশ আত্মসাৎ হয়েছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন,শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১৮টি অসচ্ছল মন্দিরে যে অতিরিক্ত ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা আত্মসাৎ হয়েছে বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন,১৮টি মন্দিরে বিশেষ বরাদ্দের চাল আমরা নিয়মিতভাবে বিতরণ করেছি। যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে ওই অর্থ বা চাল আত্মসাৎ করে থাকে, তাহলে তদন্তে প্রমাণিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি একটি টাকাও আত্মসাৎ হলে তা বরদাস্ত করা হবে না।
সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ ও ধর্মীয় উৎসবের নামে দুর্নীতি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলেন,ধর্মীয় উৎসবের পবিত্রতায় এমন লজ্জাজনক দুর্নীতি কাম্য নয়। প্রশাসনের উচিত দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা,যাতে ভবিষ্যতে কেউ ধর্মের নামে জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করতে না পারে।
Leave a Reply