মোঃ অনিকুল ইসলাম উজ্জ্বল
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার উত্তর কালামপুর (কালিবাড়ী) নুরানী বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন যে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
১৯৯২ সালে মাদ্রাসার সুপার পদে যোগদানের পর থেকে মাওলানা আলাউদ্দিন সিকদার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মাদ্রাসা থেকে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করেছেন এবং ভুয়া নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, মাদ্রাসার কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগও রয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি আমতলী উপজেলা ওলামালীগ সভাপতির দায়িত্ব নেন এবং তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আরও বেড়ে যায়। সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে তিনি মোঃ আব্দুল হককে ৫ লাখ টাকার ঘুষ নিয়ে টেকনিক্যাল শপ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ দেন। ভুক্তভোগী আব্দুল হক বলেন, “আমার জীবন নষ্ট হয়েছে, আমি তার শাস্তি চাই।”
২০২০ সালে, হাফিজুর রহমান নামের একজন নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নেয়া হয়। তবে তাকে চাকরি না দিয়ে অন্যকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও বারেক নামের একজনকেও নিয়োগ দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে যে, মাওলানা আলাউদ্দিন সিকদার শাখারিয়া এলাকায় একটি ভুয়া এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে ১০ বছরে অন্তত ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরির অভিযোগও রয়েছে।
প্রতিষ্ঠাতা এবিএম রফিকুল্লাহ বলেন, “সুপার মাদ্রাসাটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। দ্রুত তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
প্রতিবেদনের বিষয়ে মাওলানা আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কার্যক্রম হয়নি।”
বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, “ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন ও বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলমও অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, “মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতার দুই ছেলের বিরুদ্ধে আগে একটি অভিযোগ হয়েছিল, কিন্তু তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে মাওলানা আলাউদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা আবিষ্কার করার জন্য একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।
Leave a Reply