বাহাদুর চৌধুরী :
নরসিংদী সদর উপজেলার আরশীনগর মোড়ে সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দায়িত্বপালনরত অবস্থায় তিনি হামলার মুখে পড়েন। চাঁদাবাজদের হাত থেকে দুইজনকে আটক করতেই এ মর্মান্তিক হামলা ঘটে। আহত অবস্থায় তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরবর্তীতে গুরুতর অবস্থায় রেফার করা হয় ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।
জানা গেছে, সকালে বীরপুর এলাকায় একটি লাশ উদ্ধারের পর ফেরার পথে আরশীনগর মোড়ে পৌঁছালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন লক্ষ্য করেন যে, কয়েকজন ব্যক্তি প্রকাশ্য দিবালোকে অটোরিকশা ও সিএনজি চালক শ্রমিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় দুইজনকে হাতেনাতে আটক করেন।
ঠিক তখনই পেছন থেকে অতর্কিতে হামলা চালায় আরও ৪০-৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সংঘবদ্ধ মব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনের ঘাড়, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় আটক দুজনকেও ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পুলিশের আরও কয়েকজন সদস্য এই হামলায় আহত হন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরিদা গুলশানা কবির জানান, “আনোয়ার হোসেনের ঘাড় ও পায়ে গভীর আঘাত রয়েছে এবং রক্ত জমাট বেঁধেছে। তিনি শারীরিকভাবে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
ঘটনার পর পরই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে। ভোলা জেলা থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শ্রমিক নেতা আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন জামাল বলেন:
“যে দেশে পুলিশেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? প্রকাশ্যে পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করে চাঁদাবাজ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘৃণিত ও রাষ্ট্রবিরোধী।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভোলা জেলার সকল শ্রমিকের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।”
ঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি আওরঙ্গজেব কামাল বলেন:
“দিনের বেলায় শত শত মানুষের সামনে পুলিশের উপর হামলা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি—এটা প্রমাণ করে, চাঁদাবাজরা কতোটা ভয়ংকর ও ক্ষমতাধর চক্র। রাষ্ট্র এখন এই দানবদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।”
এদিকে দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ কে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন। বর্তমানে নরসিংদী জেলা পুলিশ পুরো ঘটনা তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছ।
ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন মহাসচিব চৌধুরী বলেন এই ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া জরুরি। কারণ যদি পুলিশের নিরাপত্তাই নিশ্চিত না হয়, তবে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অসহায় শ্রমিকদের জন্য এদেশ বসবাসযোগ্য থাকবে না।
Leave a Reply