মোঃ আসাদ আলী
বোচাগঞ্জ/দিনাজপুর প্রতিনিধি
বাংলার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পেশা গুলোর মধ্যে নাপিত পেশা। একসময় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক। হাট-বাজার কিংবা পাড়ায় মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নাপিত রাই ছিলেন গ্রামের মানুষের চুল দাড়ির সৌন্দর্য চর্চার একমাত্র ভরসা। তারা শুধু একজন চুল কাটিয়ে ছিলেন না, ছিলেন গ্রামের মানুষের আড্ডার সাথী, সামাজিক বার্তাবাহক এক অংশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালের পরিবর্তন ও আধুনিকতার প্রবাহে আজ এই পেশাটি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে আগে যেখানে প্রতি গ্রামে একাধিক নাপিত ছিল। সেখানে এখন গোনা কয়েকজন কোনভাবে টিকে আছে। নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আগ্রহ হারিয়েছে। শহরের মতো এখন গ্রামের তরুণরা ও আধুনিক পার্লার ও সেলুনে গিয়ে নতুন স্টাইলে চুল কাটতে আগ্রহী। এ প্রবণতায় প্রচলিত গ্রামীণ নাপিত দের আয় কমে গেছে, আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই পেশায় সঙ্গে জড়িতরা বলেন আগে যেখানে দিনে ২০-৩০ জন গ্রাহক আসছেন, এখন সেখানে ৫-৭ জন ও পাওয়া মুশকিল। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের অভাব, মূলধনের সংকট এবং সমাজে অবমূল্যায়নের কারণে এই পেশা আজ অবহেলিত। বহু পুরনো নাপিত এখন অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ কৃষিকাজ, কেউবা দিনমজুরি বা অটো মিলে কাজ করে। তবে সমস্যা সত্ত্বেও আশার আলো দেখছেন অনেকে। যদি সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই পেশাকে রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসে কম খরচে প্রশিক্ষণ ঋণ সুবিধা ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সরবাহ নিশ্চিত করে তবে এই ঐতিহ্যবাহী পেশা আবার ও পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। কমিউনিটি ভিত্তিক সেলুন গঠন, ন্যায্য পারিশ্রমিক এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নাপিত এর সম্মান ফিরিয়ে আনা নাপিত শুধুমাত্র চুল কাটেন না , তাঁরা গ্রামীন সাংস্কৃতি , ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহক। তাঁদের হারিয়ে যাওয়া অর্থ একটি সাংস্কৃতির ধ্বংস। তাই এখনই সময় ঐতিহ্যকে রক্ষা করার, সমাজে সকল মানুষকে সচেতন হওয়ার এবং এই পেশার পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়ার। একটি জাতি তার শিকড় ভুলে গেলে ভবিষ্যৎ পথ চলা দুরুহ হয়ে পড়ে। গ্রামীণ নাপিত পেশার মতো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখাই হবে প্রকৃত উন্নয়নের প্রতীক।
Leave a Reply