
মোঃ আব্দুর রহমান (নিজস্ব প্রতিনিধি):
ভোলায় জাতীয় পার্টি (বিজিপি) আয়োজিত এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১ নভেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে ভোলা সদর রোডের নতুন বাজারে জাতীয় পার্টি (বিজিপি) কার্যালয়ের সামনে এই হামলা ঘটে।
ঘটনায় জাতীয় পার্টি বিজিপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ২৫ জন নেতা-কর্মী, ভোলা সদর শ্রমিক পার্টির ২২ জন নেতা-কর্মী এবং তিনজন গণমাধ্যম কর্মী আহত হন বলে জানা গেছে। আহতদের ভোলা সদর হাসপাতাল ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার স্থলে হামলায় শিকার হওয়া সাংবাদিক বাহাদুর চৌধুরী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি’র নামধারী একদল সন্ত্রাসী হঠাৎ সমাবেশস্থলে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা প্রথমেই সংবাদকর্মীদের লক্ষ্য করে হাত বোম ফাটিয়ে আক্রমণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যাতে সাংবাদিকরা সংবাদ কাভারেজ বন্ধ করে স্থান ত্যাগ করেন। পরে তারা লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
আহত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর-এর প্রতিনিধি এবং ভোলার একটি স্থানীয় পত্রিকার সংবাদকর্মী।
ঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি আওরঙ্গজেব কামাল এবং ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন,
“গণমাধ্যম কর্মীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। তাদের ওপর হামলা মানে জনগণের কণ্ঠরোধ করা। গণতান্ত্রিক পরিবেশে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য।”
জাতীয় পার্টির বিজিপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানান এবং আহত সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
“রাজনৈতিক মতভেদ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পক্ষে।”
এদিকে ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রুহুল কবির রিজভী এক নির্দেশনায় ভোলা সদর বিএনপির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হামলার তদন্ত করে দোষীদের বহিষ্কার না করে সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা গণতন্ত্রের চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পরিবর্তে পুরো সংগঠনের কর্মীদের হতাশা তৈরি হতে পারে।
ঢাকা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,
“গণমাধ্যমের কাজ হলো ঘটনাকে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক গভীর হুমকি। সাংবাদিকরা কোনো দলের প্রতিপক্ষ নন — তারা কেবল ঘটনাকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই সংবাদকর্মীদের ওপর আক্রমণ বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য মারাত্মক হুমকি।
Leave a Reply