✍️ বাহাদুর চৌধুরী সম্পাদক ও প্রকাশক।
তারিখ: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে উঠে আসছে এক ভয়াবহ চিত্র—দুর্নীতির প্রমাণসহ তথ্য প্রকাশ করলেই বদলি করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে, আর ভয়ংকর চাপে ফেলা হচ্ছে সেই সাংবাদিকদের, যাঁরা এসব অনিয়ম প্রকাশ্যে আনছেন।
টেকনাফ, পিরোজপুর,ভোলা, মনপুরা দ্বীপ,পটুয়াখালী খুলনা, কুমিল্লা, ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, কুষ্টিয়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা কিংবা টেকনাফ থেকে – তেতুলিয়া—যেখানেই সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ‘জনস্বার্থে বদলি’ করা হয়েছে। অথচ সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তার যথাযথ প্রমাণ থাকে, তাহলে সুস্পষ্ট তদন্ত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
যেরকম – সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ধারা ৩(খ) অনুযায়ী,
কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অসদাচরণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে, যথাযথ তদন্ত ও শুনানির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই তদন্ত ছাড়াই বদলি করা হচ্ছে, যাতে ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা বিচার কার্যক্রম ধামাচাপা পড়ে যায়।
ইহাতে দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর অনেক সাংবাদিকই বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র বা ক্ষমতাশালী মহলের রোষানলে পড়ছেন। হুমকি, মামলা, এমনকি শারীরিক হামলার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। অথচ বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে একাধিক আইন ও নীতিমালা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৮ ধারা অনুযায়ী,
“কোনো সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী তাদের দায়িত্ব পালনের সময় হুমকি বা হামলার শিকার হলে, তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তদন্তযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ।”
জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা, ২০১৭ অনুসারে:
“গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সাংবাদিকদের তথ্য অনুসন্ধান ও প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ১৯ অনুযায়ী:
“কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বা অসাধু কর্মকাণ্ডের তথ্য পেলে কমিশন বাধ্য থাকবে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে।”
কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব নীতির প্রয়োগ চোখে পড়ছে না বললেই চলে।
এখানে এসে আমাদের মানবাধিকার সংস্থাগুলি ও আমি সাংবাদিক বাহাদুর চৌধুরী দেশের কাছে প্রশ্ন আমরা কি কলম থামিয়ে দেব?
গণমাধ্যম কোনো পক্ষ নয়—সত্যের অনুসন্ধানই যার একমাত্র কর্তব্য। কিন্তু যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই সাংবাদিকদের পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হয় সন্ত্রাসী বাহিনী, তাহলে প্রশ্ন উঠে যায় রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে।
আমি এবং আমাদের সকল সাংবাদিক ও জাতি জানতে চায়:
কেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে?
কেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না?
কেন দুদক নীরব?
এবং সর্বোপরি—গণতন্ত্রে সত্যের জন্য লড়াই করা কি অপরাধ?
উত্তর স্থানে এসে আমার ও আমাদের গণমাধ্যমের দাবি
১. দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বদলি নয়, বরং সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের আওতায় আনা।
২. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হুমকি ও হামলার বিশেষ তদন্ত সেল গঠন।
৩. দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে উৎসাহিত করতে উইসেল ব্লোয়ার সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন।
৪. গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চালু।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সাংবাদিকতা আজ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সত্যের পক্ষে কলম ধরা যেন অপরাধ না হয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করাই আজ সময়ের দাবি। রাষ্ট্র যদি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে, সত্য বলার অপরাধে সাংবাদিকদের রক্তাক্ত করে—তাহলে ইতিহাস নিশ্চুপ থাকবে না।
Leave a Reply