মোঃ অনিকুল ইসলাম উজ্জ্বল নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া পটুয়াখালী
ইলিশের মৌসুম শেষের পথে। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার মেলেনি কাঙ্খিত ইলিশ। তবুও ধার-দেনা পরিশোধ করার আশায় বুক বেঁধে জেলেরা পাড়ি জমিয়েছেন গভীর সমুদ্রে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন উপকূলের হাজারো জেলে পরিবার মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই বাধ সাধে বৈরী আবহাওয়া। সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও ‘প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞায়’ মাছ ধরা সম্ভব হয়নি!
এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুমে আশানুরূপ মাছ ধরতে না পেরে হতাশ উপকূলের জেলেরা।
সপ্তাহ ধরে চলমান বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব কেটেছে গত রোববার শেষ বিকেলে। লাশ হয়ে ফিরতে হবে জেনেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে গমন করেছে উপকূলের হাজারো জেলে।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাবার আশায় সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত উপকূলের হাজার হাজার মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্রে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ১৭ আগস্ট শেষ বিকেল থেকে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রচুর ঢেউয়ের ঝাপটায় সমুদ্রে টিকতে না পেরে ট্রলারগুলো উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদীতে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের খাপড়াভাঙ্গা নদীতে নোঙর করে নিরাপদে ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার ট্রলার। সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জেলেরা মাছ ধরা ট্রলার উপকূলে নিরাপদে অলস সময় পার করেছেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে ট্রলারগুলো গভীর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধনে চলে গেছে। তবে ট্রলিং ট্রলারগুলো প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে যেতে পারেনি। এর মধ্যে কয়েকটি ট্রলিং ট্রলার বেহুন্দিজাল, উইঞ্চ রেখে লম্বা জাল নিয়ে সমুদ্রে গেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত কয়েকদিন আবহাওয়া খারাপ ছিলো। সোমাবার থেকে বুধবার পর্যন্ত আবহাওয়া মোটামুটি ভালো আছে। তবে আগামী ২৮ আগস্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
সমুদ্রগামী কয়েকজন ট্রলারের মাঝি ও জেলে জানান, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়া ও সাগর উত্তাল থাকার কারণে ঘাটে ফিরে এসেছিলাম। সপ্তাহখানেক ঘাটে থেকে এখন আবার যাচ্ছি। ধার-দেনায় ডুবু ডুবু স্টাফদের বেতন বকেয়া। মাছ পেলে তো ভালো, না পেলে জেলেদের (স্টাফ) ধরে রাখাই মুশকিল হবে।
এর আগে বৈরী আবহাওয়ার সংকেত পেয়ে ঘাটে ফিরে আসার সময় সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছিলো বেশ কয়েকটি ট্রলার। বেশিরভাগ জেলেরা জীবিত উদ্ধার হলেও মারা গেছেন কয়েকজন। এর মধ্যে ৩ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে। এখনো সমুদ্রে নিখোঁজ রয়েছেন ২ জেলে। পবিরারের সদস্যরা জীবিতের আশা ছেড়ে দিয়ে লাশের অপেক্ষায় আছেন।
ট্রলিং ট্রলারের জেলেরা বলেন, প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে সমুদ্রে যাচ্ছি না। মালিক অন্য জাল দিতে পারছেন না। তাই ঘাটে বসে আছি। তবে কয়েকটি ট্রলিং ট্রলার লম্বা জাল নিয়ে সমুদ্রে গেছে।
পায়রা বন্দর এলাকার ট্রলার মালিক ছইজউদ্দিন ফকির বলেন, প্রায় সপ্তাহখানেক ট্রলার ঘাটে ছিলো। সোমবার সকালে ট্রলার সমুদ্রে পাঠিয়েছি। আশা করছি ভালো মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরবে।
কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, উপকূলের সব ট্রলার এখন সমুদ্রে গেছে। আশা করছি মাছ পাবে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে পারেনি। এখন আবহাওয়া অনুকূলে। সমুদ্রে মাছ ধরার উপযোগি পরিবেশ থাকায় জেলেরা গভীর সমুদ্রে চলে গেছে। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে তাহারা ঘাটে ফিরবে এই আশা করি।
Leave a Reply