আওরঙ্গজেব কামালঃ
গণতন্ত্র রক্ষায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা এখন অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। এবং ফেসবুকের প্রগন্ডা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থার অতি প্রয়োজন। কারণ
জানুয়ারির নির্বাচনে মূল চ্যালেঞ্জ” একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি মনে করি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় বাধা ফেসবুক সন্ত্রাস। যেকোনো মূল্যেই এটাকে প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মুখোমুখি জাতি। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই নির্বাচন শুধু সরকারের গঠনের মাধ্যম নয়, বরং জনগণের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো দেশের সাংবাদিকরা ক্রমাগত নির্যাতন, ভয়ভীতি, মামলা, ফেসবুকের প্রগন্ডা এবং হয়রানির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দেশে এখন তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিস্তারের মাধ্যমে অনলাইন সাংবাদিকতা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হলেও, সাংবাদিকদের জন্য কার্যকর ও নিরপেক্ষ আইন প্রণয়নে রাষ্ট্র এখনও ব্যর্থ। প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ১৯৭৪ সালের "দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ কন্ডিশন সার্ভিস অ্যাক্ট" থাকলেও, ইলেকট্রনিক বা অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সুরক্ষায় এখন পর্যন্ত কোনো উপযোগী আইন প্রণীত হয়নি। এই আইনি শূন্যতার সুযোগে সাংবাদিকদের উপর চেপে বসেছে একটি ‘অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা’ নান বিধ আইন। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়ে অন্তত ১৩৭ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, শতাধিক সাংবাদিকদের অহেতুক মামলায় ঢুকানোর চেষ্টা। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকের মাধ্যমে মব সৃষ্টি সাংবাদিক পেশা হুমকীর মুখে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট, হুমকি, গ্রেপ্তার ও চাকরি হারানোর ভয়—এগুলো যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত জুলাই মাসে গণবিক্ষোভ বা অভ্যুত্থানের সময় সুনির্দিষ্টভাবে দেখা গেছে, কিভাবে কিছু সাংবাদিক কেবলমাত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার জন্য শিকার হয়েছেন মিথ্যা অভিযোগের।অক্টোবর মাসেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে সাংবাদিক হোসাইন জিয়াদ ও মো. পারভেজ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিগৃহীত হন। একই জেলায় আরও দুই সাংবাদিক পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এছাড়া ঝিনাইদহে একজন সাংবাদিককে তার রিপোর্টের জন্য মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছে।এই পরিস্থিতি কেবল সাংবাদিকদের নয়, পুরো জাতির গণতান্ত্রিক চর্চার জন্যই হুমকি। কারণ, সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়—এটি জাতির বিবেকের ভাষ্য। একটি স্বচ্ছ নির্বাচন কিংবা দুর্নীতিবিরোধী প্রশাসন গঠনের পূর্বশর্ত হলো তথ্যপ্রবাহের স্বাধীনতা। যখন সাংবাদিকরা ভয়ে-হয়রানিতে সত্য গোপন করতে বাধ্য হন, তখন জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এই পরিস্থিতিতে আগামী জানুয়ারির নির্বাচন ও সাংবাদিকরা কত টুকু ভূমিকা রাখবে সেটা এখন প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারির নির্বাচন একটি বড় পরীক্ষার নাম। এই নির্বাচন ঘিরে প্রচুর গুজব, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং তথ্য বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে। এ সময়েই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বাধীন ও সাহসী সাংবাদিকতার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজ অনুসন্ধানী রিপোর্ট মানেই হয়রানি, রাজনৈতিক শত্রুতা বা গ্রেপ্তারের আশঙ্কা। তবুও এখন থেকে সাংবাদিকদের কাজ হবে— সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য তুলে ধরা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি যাচাই করা, ভোটারদের সচেতনতা বাড়ানো, গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা,ভোট কারচুপি, বাধা বা সহিংসতার তথ্য প্রকাশ করা। অবশ্যই এ কাজ করতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং আইনি সুরক্ষা। আর এজন্য সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণমাধ্যম আইন হালনাগাদ করা হোক: সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ গণমাধ্যম আইন প্রণয়ন জরুরি। অনলাইন ও ইলেকট্রনিক সাংবাদিকদের জন্য পৃথক আইনি কাঠামো থাকা আবশ্যক। সাংবাদিকদের হয়রানির ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে: প্রতিটি হামলা বা মামলার পেছনে কারা, কেন — তা জনগণের সামনে আসা জরুরি।সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলোকে সক্রিয় হতে হবে: রাজনৈতিক নিরপেক্ষতায় থেকে সকল সাংবাদিকের অধিকার রক্ষা করতে হবে, কারণ সাংবাদিকতা কারো দলের নয় — এটি জনগণের। সাংবাদিকরা সবসময় জনগণের পক্ষে কাজ করে কোন সরকারের একছত্র কাজ করে না। এক কথায় বলতে গেলে অপরাধের বিরুদ্ধে কলম গর্জিয়া ওঠে সাংবাদিকের। হয়তো দুই একদিন সাংবাদিক নিজেদের আখের গোছানোর জন্য কোন না কোন সরকারের দাবিদার হিসাবে নিজেকে বিলিয়ে যায় বিসর্জন দেয় সাংবাদিকতা। কিন্তু দেশের অধিকাংশ সাংবাদিকরা এর বিপরীত কাজ করে। কোন দামেই তারা বিক্রি হয় না এটাই বাস্তব। যে কারণে সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত জীবন দিতে হচ্ছে মামলা ও হামলার শিকার হতে হচ্ছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা অর্থাৎ অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সর্বোপরি সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের পূর্বশর্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি। ফলের আগামী নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম। এদিকে,প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে একটা বিশেষ ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে হচ্ছে। এটাকে তিনি দেশের জন্য কিছু করতে পারার শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতিও একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার। তিনি বলেন, এ কাজ নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশ্বাস করে তিনি সাংবাদিকদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আমি মনে করি এজন্যে
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নজরদারি বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একটা সমঝোতা প্রয়োজন হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটা কতটুকু সম্ভব সেটা এখন দেখতে চাই। জুলাই সনদ নিয়ে অনেক ভিন্নমত পোষণ করছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অনেকে স্বাক্ষর করতেও চাচ্ছে না। তবুও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এটা বাস্তবায়ন হবে। সে যাই হোক এ সকল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন গণমাধ্যম কর্মীরা পূর্ণ পূর্ণভাবে তুলে আনবে রাজনৈতিক দলের মতামত। এবং জনগণকে বোঝাতে বাধ্য হবে গণতন্ত্রের কারা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। কিন্তু এখানে তো সমস্যা সাংবাদিকরা যখন কাজ করতে যাচ্ছে তখন নানাবিধ বাধা তাদের সামনে ধাপিত হচ্ছে। হতে হচ্ছে নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এর কোন বিচার পাচ্ছে না তারা। আমি মনে করি
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্রে যখন সাংবাদিকদের কলম কাঁপে, তখন গণতন্ত্রও কাঁপে। যেটা জোলার আগেই সবাই বুঝতে পেরেছে।জানুয়ারির নির্বাচন যেন সত্যিকার অর্থে জনতার রায় প্রতিফলিত করে—তা নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতেই হবে। এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার—আমরা কি চাই একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, নাকি ভয় ও নিয়ন্ত্রণে আবদ্ধ একটি সংবাদবিমুখ সমাজ? সাংবাদিকতা রক্ষা করলেই গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে।
লেখক ও গবেষকঃ
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি
ঢাকা প্রেস ক্লাব।
প্রকাশক ও সম্পাদক : বাহাদুর চৌধুরী মোবাইল: ০১৩২৩০০২৩৭৭
সহসম্পাদক : মেহেদী হাসান হৃদয় মোবাইল:০১৬১০০৯৩৬২২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যলয়ঃ চৌধুরী কমপ্লেক্স, চেয়ারম্যান বাজার, চরফ্যাশন, ভোলা ।
মোবাইলঃ০১৩২৩০০২৩৭৭ ইমেইলঃ mh01610093622@gmail.com T.L.No:183 T.I.N:534926870539