কমিশনার কবির পালোয়ান ::
বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও সাংবাদিক মহল দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও ‘দলের দোসর’ বলে গুজব ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
এই ধরনের অপপ্রচার শুধু ব্যক্তি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা, পেশাগত নিরপেক্ষতা এবং সাংবিধানিক কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
ওই সমস্ত সুবিধাবাদীদের কাছে আমার প্রশ্ন প্রোগ্রামে ছবি থাকলেই কি আনুগত্য প্রমাণ হয়?
আমরা দেখেছি —
একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), এএসপি, সাংবাদিক, অথবা এলজিইডি কর্মকর্তা — তারা সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন।
এটা স্বাভাবিক, কারণ:
একটি সরকার যখন ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি থাকে।
সাংবাদিকদেরও কাজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সব ধরনের প্রোগ্রামে রিপোর্টিং করা — তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই ছবি বা উপস্থিতিকে “রাজনৈতিক আনুগত্য” বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে — যা একধরনের বিকৃত, দুরভিসন্ধিমূলক অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়।
বাংলাদেশ সংবিধান
অনুচ্ছেদ ২১ ও ১৩৩ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা সরকারকে সহযোগিতা করতেই বাধ্য — এটা কোনো রাজনৈতিক আনুগত্য নয়, বরং সাংবিধানিক দায়িত্ব।
সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯
একজন কর্মকর্তা যদি নিরপেক্ষতা বজায় রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন, তবে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তকমা লাগানো মানে তার মানহানি করা, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮
ধারা ২৫ ও ২৯ অনুযায়ী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছবি বা বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করলে সেটি শাস্তিযোগ্য।
সাংবাদিক পেশাটি স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও জনসেবার অপরিহার্য অঙ্গ।
তারা যেকোনো দলের প্রোগ্রামে রিপোর্ট করতে পারেন — এটি পেশাগত স্বাভাবিকতা।
তাদের ছবি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে থাকতেই পারে।
তাই সেই ছবি তুলে ধরে একজন সাংবাদিককে কোনো দলের দোসর বলাটা শুধু অশিক্ষার বহিঃপ্রকাশ নয় — এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সরাসরি আঘাত।
এই ধরণের আচরণ স্বাধীন গণমাধ্যমের পথ রুদ্ধ করে দেয়, যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বর্তমানে এই অপপ্রচার একটি ‘ডিজিটাল ক্যান্সার’ হয়ে উঠছে
আজকে একজন ইউএনও বা ডিসি, কাল একজন সাংবাদিক, পরশু একজন পুলিশ কর্মকর্তা —
এই ধারাবাহিক মানহানি, বিভ্রান্তিকর প্রচার, এবং দলীয় রঙ মাখানোর অপপ্রয়াস আগামী দিনে রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল করবে।
একটি দেশের প্রশাসন ও সাংবাদিকতা পেশা যদি রাজনৈতিক অপপ্রচারে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আস্থা হারাবে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা বা সাংবাদিকের পেশাগত অবস্থানকে রাজনৈতিকভাবে টেনে এনে অপমান করা মানেই রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত। এটি শুধু অন্যায় নয় — এটি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
#কমিশনার কবির পালোয়ান,
বরিশাল বিভাগীয় প্রধান,
দৈনিক দক্ষিণের অপরাধ সংবাদ।
প্রকাশক ও সম্পাদক : বাহাদুর চৌধুরী মোবাইল: ০১৩২৩০০২৩৭৭
সহসম্পাদক : মেহেদী হাসান হৃদয় মোবাইল:০১৬১০০৯৩৬২২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যলয়ঃ চৌধুরী কমপ্লেক্স, চেয়ারম্যান বাজার, চরফ্যাশন, ভোলা ।
মোবাইলঃ০১৩২৩০০২৩৭৭ ইমেইলঃ mh01610093622@gmail.com T.L.No:183 T.I.N:534926870539