
হাফিজুর রহমান যশোর:
যশোরের নওয়াপাড়ার আলোচিত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনিকে ৪ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নির্মম নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে খুলনায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম।
পুলিশ জানিয়েছে, নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন অভিযোগ করেন যে, গত বছরের জুলাই মাসে তার স্বামীকে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। চাঁদা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে বালুতে বুক পর্যন্ত পুঁতে রেখে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই ঘটনায় আসাদুজ্জামান জনিসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে চলতি বছরের ৩ আগস্ট আসাদুজ্জামান জনি ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুনের দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকালে শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে সুকৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন হিরা নামের এক ব্যক্তি। এ সময় জনি তাঁকে মারধর করেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন।
এরপর টিপুর স্ত্রী সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামান জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) করেন। টাকা পেয়ে ওই দিন টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেট পার হলে সৈকত হোসেন হিরা তাঁর গতি রোধ করেন।
এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত টিপুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারেন, টিপুকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির মালিকানাধীন কণা ইকোপার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টিপুর স্ত্রী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে বাদীকে মারধর করেন এবং বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুচাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা দাবি করেন।
এ সময় টিপু বাধ্য হয়ে তাঁর ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর ম্যানেজার প্রেসক্লাবের সম্পাদক মফিজের অ্যাকাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) করেন।
এ সময় মফিজুর আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন। পাশাপাশি জনির নামে ক্রয় করা তিনটি ও দিলীপ শাহার নামে ক্রয় করা তিনটি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেন।
জানতে চাইলে বাদী আসমা খাতুন বলেন, ‘দুই দফায় আমার কাছ থেকে চার কোটি টাকা নিয়েছে জনি। এত দিন নিরাপত্তার কারণে অভিযোগ দিইনি। এখন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে। তাই আমি সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।’
এ ঘটনায় দৈনিক নাগরিক ভাবনা, দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ ও ডেইলি কান্ট্রি টুডেসহ বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। এরপর যৌথবাহিনী সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জনিকে হন্নে হয়ে খুঁজতে শুরু করে। একপর্যায়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে যৌথ বাহিনী খুলনা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জনি পলাতক ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনীর একটি দল মঙ্গলবার রাতে খুলনায় অভিযান চালায় এবং জনিকে আটক করতে সক্ষম হয়। তাকে বর্তমানে অভয়নগর থানায় রাখা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে আরও কিছু মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন , নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুনের দেয়া ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে সম্প্রতি জনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার ভিত্তিতেই যৌথ বাহিনীর অভিযানে তাকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর পদ স্থগিত করা হয়েছিল। তিনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : বাহাদুর চৌধুরী মোবাইল: ০১৩২৩০০২৩৭৭
সহসম্পাদক : মেহেদী হাসান হৃদয় মোবাইল:০১৬১০০৯৩৬২২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যলয়ঃ চৌধুরী কমপ্লেক্স, চেয়ারম্যান বাজার, চরফ্যাশন, ভোলা ।
মোবাইলঃ০১৩২৩০০২৩৭৭ ইমেইলঃ mh01610093622@gmail.com T.L.No:183 T.I.N:534926870539