মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে গবাদিপশু একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। কৃষকের জীবিকা যেমন গরুর দুধ ও চাষের কাজে নির্ভর করে, তেমনি কোরবানির সময় কিংবা মাংস বিক্রির ক্ষেত্রেও গরুর রয়েছে বিশাল চাহিদা। তবে সম্প্রতি এক কৃষকের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে অসুস্থ গরু কীভাবে কসাইদের হাতে পৌঁছায়, সেই গোপন চক্রের কথা উঠে এসেছে তাঁর মুখে।
এই কৃষক জানান,গরু যদি অসুস্থ হয় যেমন পেট ফুলে যায়,হাঁটা বন্ধ হয়ে যায়,খাওয়া-দাওয়া বন্ধ থাকে তখন আমরা অনেক সময় চিন্তায় পড়ে যাই। এসব গরু তো হাটে বিক্রি করাও যায় না। কিন্তু তখনই কিছু ডাক্তার এসে বলেন,একটা ব্যবস্থা আছে, কেউ কিনে নেবে।’ পরে দেখি কসাইরা এসে দরদাম করে।
সবচেয়ে ভয়ানক তথ্যটি হল তিনি বলেন, এই অসুস্থ গরুর সন্ধান আসলে দেয় কিছু লোভী পশু ডাক্তার। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে রোগী দেখা বা চিকিৎসার নাম করে বোঝে কোন গরু চলাফেরা করতে পারছে না বা মৃতপ্রায়। তারপর সেই তথ্য পৌঁছে যায় কসাইদের হাতে। তারা যেন রিপোর্ট তৈরি করে নেয় কোন গরু অসুস্থ, কার বাড়ি, কখন কিনলে সুবিধা।
আমার বাড়ির পাশের একজন কৃষক মাত্র ১৫ হাজার টাকায় একটা গরু বিক্রি করে দিলো,যেটা সুস্থ থাকলে হাটে অন্তত ৫০ হাজারে বিক্রি হতো,বলেন ওই কৃষক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের চক্র সমাজের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এসব গরুর মাংস মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। টিবি (গরুর যক্ষ্মা), ব্রুসেলোসিস, অ্যানথ্রাক্সের মতো সংক্রামক রোগ পশু থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
আইন কী বলছে ? বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী,কোনো অসুস্থ গরু জবাই করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গরুর শারীরিক অবস্থা যাচাই না করে জবাই করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব নিয়ম কতটা মানা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
স্থানীয়দের দাবি-গ্রামে-গঞ্জে গোপনে কসাইদের এই ‘ডোর টু ডোর’ অসুস্থ গরু সংগ্রহের প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। ডাক্তারদের নৈতিকতা ও পেশাগত দায়িত্ববোধ জোরদার করা প্রয়োজন। কসাই এবং সহযোগী চক্রকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
একজন কৃষকের মুখে ভর করে উঠে আসা এই চিত্র হয়তো পুরো চিত্র নয়, কিন্তু এটা যে একটা বড় বাস্তবতার অংশ তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
গরু শুধু পশু নয়, এটা কৃষকের জীবন-জীবিকার প্রতীক। সেই বিশ্বাস ও অর্থনৈতিক ভরসার উপর যখন লোভের আঘাত পড়ে, তখন গোটা সমাজেই নেমে আসে সংকট।
সম্পাদক ও প্রকাশক বাহাদুর চৌধুরী, সহসম্পাদক মেহেদী হাসান হৃদয়,
অফিস : চৌধুরী কমপ্লেক্স, চেয়ারম্যান , চরফ্যাশন, ভোলা। মোবাইল: ০১৩২৩০০২৩৭৭,০১৬১০০৯৩৬২২ ইমেইলঃ dainikdakshineroporadh@gmail.com